বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনায় নারী শিশুসহ মরদেহ উদ্ধার-৩২
ঢাকা, ২৯ জুন, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : রাজধানীর বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারী শিশু সহ ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলসহ আইনশৃংখলা বাহিনী। এ ঘটনায় মো: রিফাত (২৪) নামে এক যুবককে জীবিত অবস্থায় উদ্বার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা। আহত অবস্থায় তাকে ন্যাশনাল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. সালেহ উদ্দিন ঘটনাস্থল থেকে জানান “এখন পর্যন্ত ৩২টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে তিন জন শিশু,আট জন নারী ও একুশ জন পুরুষ রয়েছেন। তাদের নাম ও বিস্তারিত পরিচয় এখনও জানা যায়নি। এদিকে বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় মৃত প্রতিটি পরিবারকে দেড় লাখ টাকা করে দেয়া হবে।
লঞ্চডুবির ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ ঘোষণা দেন । এছাড়া লাশ দাফনের জন্য নগদ ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় হয়েছে। লঞ্চডুবির ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মন্ত্রণালয় আজ সোমবার এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) মো: রফিকুল ইসলাম খানকে আহবায়ক এবং বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা) মো: রফিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- নৌপরিবহন অধিদফতরের চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন সরকার, বিআইডব্লিউটিসি’র প্রধান প্রকৌশলী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেভাল আর্কিটেকচার এ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পর্যায়ের একজন প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিসের একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি, নৌপুলিশের একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি । এদিকে, কোস্ট গার্ড সদর দফতরের মিডিয়া উইং এর কর্মকর্তা লেঃ কমান্ডার হায়াৎ ইবনে সিদ্দিক আজ গনমাধ্যমকে জানান, এখন পর্যন্ত নারী শিশুসহ ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সন্দেহ থাকবে এখনও মরদেহ থাকতে পারে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোস্ট গার্ডের উদ্ধার অভিযান চলবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের ডিউটি অফিসার লিমা খানম জানান, লঞ্জ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বাহিনীর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন, পরিচালক (অপারেশন-মেইনটেন্সেস) লেফটেন্ট্যান্ট কর্ণেল মো. জিল্লুর রহমান, উপ-পরিচালক (ঢাকা) দেবাশীষ বর্ধণ ও সহকারী পরিচালক মো. সালেহ উদ্দিন। ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ডুবুরি টিম,একটি ক্রাউন কন্ট্রোল টিম, একটি অগ্নিশাসক জাহাজ ও বিআইডব্লিউটিএসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা এখনও পর্যন্ত উদ্বার অভিযানে কাজ করছেন। উদ্বার অভিযান এখনও সমাপ্তি হয়নি। চলমান রয়েছে। এছাড়া কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, বিআইডাব্লিউটিএ ও নৌবাহিনীর ডুবুরি দল যৌথভাবে উদ্ধার অভিযানে অংশ গ্রহণ করেছে।
সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম ভূঁইয়া বলেন, সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে “মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি এলাকা থেকে ৬০-৭০ জন যাত্রী নিয়ে মর্নিং বার্ড নামের লঞ্চটি ঢাকায় ফিরছিল। লঞ্জটি ফরাশগঞ্জ ঘাটে এসে পৌছালে পিছন দিক থেকে ঢাকা-চাঁদপুর রুটের ময়ূর-২ নামে অপর একটি লঞ্চ ধাক্কা দিলে মর্নিং বার্ড লঞ্চটি ডুবে যায়। এসময় লঞ্চটির কয়েকজন যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠলেও অধিকাংশ যাত্রী ডুবে যায়। ময়ূর-২ লঞ্চটি জব্দ করা হয়েছে। লঞ্চের মাস্টার পালিয়েছেন।
এদিকে ৩২ জনের মৃতদেহ রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা জানান, নিহতের মরদেহ গুলো তাদের স্বজনদের কাছে হস্থান্তর করা হচেছ। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌযান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) কর্মকর্তা এ কে এম আরিফ উদ্দিন জানান, লঞ্চটি উদ্ধার করতে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যয় নামের একটি জাহাজ পোস্তগোলা ব্রিজের নীচে এসে আটকে গেছে। উদ্ধার যন্ত্রের কারনে ব্রীজের নীচ দিয়ে জাহজিটি আসতে পারছে বলেও জানান তিনি।