বিশ্বায়নের বাস্তবতায় বাঙালির আত্মপরিচয়ের তালাশের আহবানে ১৪২৫ বাংলা নববর্ষ বরণ
ঢাকা, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : বিশ্বায়নের বাস্তবতায় বাঙালির আত্মপরিচয়ের তালাশের আহবানে ১৪২৫ বাংলা নববর্ষ বরণ। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে মর্তুজা কবিরের বাঁশিতে রাগ আহীর ভাঁয়রো পরিবেশনার মধ্য দিয়ে রমনা বটমূলে শুরু হয় ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন। একক ও সম্মিলিত কন্ঠে সংগীত পরিবেশনা আর কবিতায় ছায়ানটের শিল্পীরা স্বাগত জানান পহেলা বৈশাখকে।
শনিবার সকাল ৯ টায় শোভাযাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে শুরু হয়। এরপর এটি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, শাহবাগ ও টিএসসি মোড় ঘুরে ফের চারুকলার সামনে গিয়ে সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে শেষ হয়। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মঙ্গল শোভাযাত্রায় সকলের অংশগ্রহণ ও উচ্ছ্বাসে আরো দীপ্ত হয়েছে নতুন বছর ১৪২৫। শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী উপস্থাপনের জন্য নানা বিষয় স্থান পেয়েছে।
শোভাযাত্রায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারু জ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো ছিল পুরো এলাকা। ঢাক-ঢোলের বাদ্য আর তালে তালে তরুণ-তরুণীদের নৃত্য, হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দ-উল্লাস মাতিয়ে রেখেছিল পুরো শোভাযাত্রা।
২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে হওয়া এ শোভাযাত্রা। সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তিকে রুখে দেবার অঙ্গীকার নিয়ে রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রা বের করে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন।
আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা নববর্ষের এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রায় নানা রঙের সাজসজ্জার মধ্য দিয়ে বাঙালি ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। এতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি শোভা পায়। ঘোড়ার গাড়ি, পিকাপ ভ্যানে চড়েও নেতা-কর্মীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রায় দুটি হাতিও রাখা হয়।
শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য ‘জাতীয় ফল কাঁঠাল’। শোভাযাত্রায় পাশাপাশি ছিল কাঁঠবিড়ালী, শেয়াল ও তাল, কামরাঙ্গাসহ দেশীয় বিভিন্ন ফল-ফলাদির প্রতিকৃতি, পুতুল, পাখি, পেঁচা ও রাজা-রানীর মুখোশ, ঘোড়া, সিকা, সরা, অন্যান্য লোকজ ঐতিহ্য, অলঙ্কৃতপাত্র ইত্যাদি। শোভাযাত্রায় গ্রাম বাংলার নৈসর্গিক দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়।
কেবল দেশের বড় শহরগুলোতেই নয়- এবারের বর্ষবরণ দেশের উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। সকল বিভাগীয় শহর, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, উপজেলা শহর ও নদীবন্দর এলাকায় আজ সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪২৫ বরণ-উৎসব শুরু হয়।