বিনিয়োগে যুবসমাজকে আকৃষ্ট করার আহ্বান, বেজার প্রতিঃ প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা, ২০ আগস্ট, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ধারা আরো গতিশীল করতে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিশেষ করে যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে আরো পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ এখানে বেজার গভর্নিং বডির ৭ম ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে এই আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা দেশের সামাজিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা আরো গতিশীল করতে চাকরির পেছনে ছোটার পরিবর্তে বিনিয়োগ করতে (একশ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন) ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিশেষ করে যুবসমাজকে উৎসাহিত করতে কাজ করছি।
প্রধানমন্ত্রী আবাদী জমি এবং পরিবেশ রক্ষা করে চাকরির সুযোগ সৃষ্টিতে স্থানীয় বিনিয়োগ ও বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে শিল্পায়নের পাশাপাশি কৃষি উন্নয়নের জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিও অনুরূপ আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে যোগ দেন। গভর্নিং বডির অন্যান্য সদস্যগণ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সচিবালয় থেকে সংযুক্ত হন। কোন সন্দেহ নেই, আমাদের অর্থনীতি কৃষির ওপর নিভর্রশীল। তবে, আমাদেরকে আরো শিল্পায়নের প্রয়োজন। শিল্পায়ন ছাড়া কোন দেশের অগ্রগতি হতে পারে না। তিনি দেশের ভূমির পরিমান কমে আসা সত্ত্বেও বিপুল জনগোষ্ঠির খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আবাদি জমি রক্ষায় প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
বেজার সবোর্চ্চ নীতিনির্ধারণী গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা শিল্পায়নের ক্ষেত্রে পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে সংশ্লিষ্টদের নিদের্শ দিয়ে বলেন, তার সরকার ইতোমধ্যে ডেল্টা প্লানও গ্রহন করেছে। আমরা আবাদী জমি এবং পরিবেশ রক্ষায় একশ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ এলাকা নির্বাচন করেছি। তিনি বলেন, সরকার দেশে কর্মসংস্থান এবং দেশবাসীর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বিশেষ করে রফতানি বৃদ্ধি করতে সারাদেশে পরিকল্পিত শিল্পায়ন করতে চায়। এ লক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকায় (কেবলমাত্র রাজধানী ও বন্দর এলাকা বাদে) বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমরা কৃষি পণ্য কাচাঁমাল হিসাবে ব্যবহার করতে একটি বিশেষ এলাকায় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারে প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের সার্বিক উন্নয়ন করা। এ জন্য শিল্পোন্নয়ন এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশসহ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ এর বিরূপ প্রভাব সত্ত্বেও দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি আরো জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের নেয়া পদক্ষেপসমূহের উল্লেখ করে বলেন, প্রতিটি খাতেই বঙ্গবন্ধু সরকারের অবদান রয়েছে। ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারের নেয়া উন্নয়ন কর্মসূচি দেখে আমি বিস্মৃত হয়েছিলাম, স্বাধীনতা লাভের মাত্র সাড়ে তিন বছরে এমন কোন খাত ছিল না, যেখানে বঙ্গবন্ধু সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু এমন একটি সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন, যখন দেশের প্রতিটি খাতই ছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত। সে অবস্থায় দেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে বসাতে সম্ভব সবধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল বঙ্গবন্ধু সরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলকারখানা জাতীয়করণ করে পুনরায় চালু করলেন এবং কৃষকদের কর্মপ্রেরণা দেয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত সেতু, কালভার্ট, সড়ক, রেল লাইন এবং অন্যান্য উন্নয়ন কাঠামো পুনঃনির্মাণ করেন। বঙ্গবন্ধু দেশে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রথম চালু করেছিলেন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন জোরদারে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে তৎকালীন ১৯টি জেলা ভেঙ্গে ৬০টি জেলা করেছিলেন এবং স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু সরকারের নেয়া এসব পদক্ষেপের ফলে মাত্র সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। তবে দুর্ভাগ্যজনক, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা এবং তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর সামরিক স্বৈরশাসকদের নেয়া পদক্ষেপে পাকিস্তানি স্টাইলে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি এবং হত্যাযজ্ঞ চলে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বাংলাদেশ অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং সে সময়ে মুক্তিযুদ্ধপন্থী কোন সরকার ক্ষমতায় ছিল না। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সকল খাতে দেশকে স্বাবলম্বী করে। দেশে ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত হয়। এর আগে বিএনপি জামাত সরকারের সময়ে দেশে ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না থাকায় দেশ আবার সাত আট বছর পিছিয়ে যায়। ২০০৮ সালে বিপুলভোটে বিজয় লাভ করে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তার সরকার জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির মতো দেশের অর্থনীতির উপরেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাস অবসানের পর বাংলাদেশ এবং বিশ্ব অর্থনীতি পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন।