বসুরহাট থেকে চট্টগ্রামের দুধ্রর্ষ সন্ত্রাসী অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার
নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি, লূৎফুল হায়দার চৌধুরী, ১১ জানুয়ারি, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : চট্টগ্রামের আলোচিত দুধ্রর্ষ সন্ত্রাসী ৩০ মামলার আসামি নুরে আলম নুরু (৪০) ও তার সহযোগী মো. কাউছার (৩৮) কে নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে সিএমপির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক এ তথ্য জানান। তিনি জানান, নগরীর আকবর শাহ থানা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম জোনের সদস্যরা শুক্রবার (৮ই জানুয়ারি) রাতে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শান্তিরহাট থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।
এ সময় নুরুর আস্তানায় মাটির নিচ থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, একটি রিভলবার, দুইটি কিরিচ ও একটি রাম দা এবং ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে পুলিশ। অভিযানে অংশ নেয়া নগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম জোনের পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান জানান, নুরে আলম নুরু নগরীর আকবরশাহ থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তার রয়েছে বিশাল বাহিনী। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় মাদক ও অস্ত্র কারবার, চুরি, ডাকাতি, লুটপাট, পাহাড় কাটাসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা রয়েছে।
সিএমপির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক বলেন, নুরু নগরীর জনবহুল আকবরশাহ থানার এক নম্বর ঝিল এলাকার পাহাড়ে বাস করতেন। তার আস্তানার চারপাশে ২৪ ঘণ্টা পালাক্রমে পাহারা থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা অপরিচিত কেউ এলাকায় গেলে তার বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৬ই জুলাই বন্দুক, এলজি ও বিপুল গুলিসহ গ্রেপ্তার করে নুরুকে ৭ই জুলাই আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। এরপর জামিনে বেরিয়ে এসে পুরনো পথেই হাঁটে এই সন্ত্রাসী। বর্তমানে তার মামলার সংখ্যা দুই ডজনেরও বেশি। ২০১২ সাল থাকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নগরের আকবরশাহ থানা ও খুলশী থানায় ১৮টি মামলা দায়ের হয় তার বিরুদ্ধে।
আকবরশাহ এলাকার পুর্ব ফিরোজশাহ ১ নম্বর ঝিলের পাহাড়ে নুরু বসবাস করলেও পার্শ্ববর্তী বেলতলি ঘোনা, নাছিয়া ঘোনা এলাকা দাবড়ে বেড়াচ্ছে নুরুর বাহিনী। অবৈধভাবে পাহাড় কেটে বাসস্থান করায় নুরুর আস্তানায় যাওয়া-আসার রাস্তায় সরকারি উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। প্রায় তিন কিলোমিটার মেঠোপথ মাড়িয়ে তার আস্তানায় যেতে হয়। দীর্ঘ পথ মাড়িয়ে যাওয়া আসার ঝুঁকি একাধিকবার নিয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সফল হয়নি। তবে এবার পুলিশ এক টানা অভিযান চালিয়ে কব্জায় আনে নুরুকে।
ফারুক উল হক বলেন, গত ২৬শে ডিসেম্বর আকবর শাহ থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা যৌথভাবে নাছিয়াঘোনায় অভিযানে গেলে নুরুর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। সেদিন নুরুর এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হলেও নুরু পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এরপর আবার অভিযান চালিয়ে তার আরও ১৩ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। নুরে আলম নুরু কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মৃত ধনা মিয়ার ছেলে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি কোনো এক সময় কুমিল্লার থেকে এসে চট্টগ্রামের ফিরোজশাহ কলোনীর নাছিয়া ঘোনা ১নং ঝিল এলাকায় বসতি গড়ে নুরুর বাবা ধনা মিয়া ভান্ডারী।
শিশুকাল থেকেই নাছিয়া ঘোনাতে বেড়ে উঠে মো. নুরুল আলম ওরফে নুরু। তার কর্মজীবন শুরু হয় নগরের ফয়সলেকে কনকর্ড গ্রুপের কর্মচারী হিসেবে। সেই থেকে তার পাহাড় যাত্রা। শুরুতে পাহাড়ে বসবাস ও পরে পাহাড়ে মাটি চুরি। শেষে পাহাড় দখলের মাধ্যমে ঘটে নুরুর অন্ধকার জগতের বিস্তৃৃতি। নুরুর জীবন-যাপন অনেকটা বলিউডের ভিলেনের মতো। গুলি ও এলোপাতাড়ি কিরিচ চালানোয় পারদর্শী নুরু।
আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির হোসেন বলেন, ফয়স লেকের কাছে পাহাড়ে বসবাস করে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তোলে নুরু। প্রথমে বিভিন্ন ছোট ধরনের অপরাধ, চুরি করলেও পরে পাহাড় কাটায় জড়িয়ে পড়ে। গড়ে তোলে ৫০-৬০ জন সদস্যের সক্রিয় বাহিনী। পাহাড় দখল করে, কেটে অবৈধভাবে ঘর ও প্লট তৈরি করে বিক্রি করছিল।
এমনকি ফয়স লেক কেন্দ্রিক পাহাড়ের মূল্যবান গাছ কেটে কাঠ পাচারেও জড়িত নুরু। এক যুগ ধরে পাহাড় দখল, পাহাড় কাটা, গাছ কেটে পাচার, অপহরণ, ধর্ষণ ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত সে। তার আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। রিমান্ডে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।