বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো স্বীকৃতির মাধ্যমে প্রমাণিত, ইতিহাসকে কখনো মুছে ফেলা যায় না, ইতিহাসও প্রতিশোধ নেয়, ইতিহাসও সত্যকে তুলে ধরে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ঢাকা, স্টাফ রিপোর্টার, (আরিফ পাটওয়ারী), ১৮ নভেম্বর, ২০১৭ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বের অমূল্য দলিল হিসেবে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেয়ায় প্রমাণিত হয়েছে ইতিহাসকে কখনো মুছে ফেলা যায় না বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জাতির মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে সকলকে সতর্ক থাকারও আহবান জানান। তিনি আজ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইউনেস্কোর জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণকে ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি রেজিষ্টারে অন্তর্ভুক্ত করা উপলক্ষ্যে আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। প্রায় ৪৬ বছর আগে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়েই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সমগ্র জাতিকে বাঙালি জাতিস্বত্তার মূলমন্ত্রে আবদ্ধ করার এবং স্বাধীনতার আহবান হিসেবে স্বীকৃত তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি শুধু স্বীকৃতিই নয়, প্রতিশোধও বটে। ইতিহাসও প্রতিশোধ নেয়, ইতিহাসও সত্যকে তুলে ধরে। যতই তা মুছতে চেষ্টা করা হোক ইতিহাস তার সত্যিকারের অবস্থানটা অবশ্যই তুলে ধরবে। আজকে সেই স্বীকৃতিই বাংলাদেশ পেয়েছে। এই স্বীকৃতির মধ্যদিয়ে শুধু এই ভাষণ নয়, সমগ্র বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি, সকল শহীদ, সকল মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি সকলেই আজকে বিশ্বদরবারে সম্মানিত হয়েছে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় যারা একদিন এই ভাষণ বাজাতে বাধা প্রদান করেছে, যারা জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে, আজকে যখন ইউনেস্কো এই ভাষণকে তাঁর ঐতিহাসিক দলিলে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের কি এখন লজ্জা হয় না। তাদের কি এখন এতটুকুও দ্বিধা হয় না।
‘ওয়াল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কোর এই সম্মাননা প্রদান উপলক্ষ্যে আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় দেশ বরেন্য ব্যক্তিবর্গসহ লাখো জনতার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানস্থল ও তাঁর চারপাশ পূর্ণ হয়ে ওঠে। গত ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি রেজিষ্টারে অন্তভূক্ত করে। এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, বিজ্ঞানী ও লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি ও প্রধান বিয়েট্রিস খলদুন। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে জাসদ সভাপতি এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম, এবং ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদা, বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং নের্তৃস্থানীয় শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ নাগরিক সমাবেশে অংশ নেন।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে অর্ন্তভূক্ত করার জন্য ইউনেস্কোর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে নাগরিক কমিটির পক্ষে ‘লেটার অব থ্যাঙ্কস’ পড়ে শোনান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী, ওবায়দুল কাদের। বেলা ২টা ৪০ মিনিটের দিকে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নাগরিক সমাবেশ।
গান, আবৃত্তি আর অতিথিদের বক্তব্যে প্রাণবন্ত এ সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ লাল ও সবুজ পোশাক পরিধান করে অংশ নেয়ায় গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছেয়ে গিয়েছিলো লাল-সবুজে। বিশাল নৌকায় মঞ্চ এবং উদ্যানের বিভিন্ন অংশে ছোট বড় নৌকা ছাড়াও নানাভাবে সাজানো হয় ঐতিহাসিক এই উদ্যানকে।
পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো পাঠের পর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত ‘ধন্য মুজিব ধন্য, বাংলা মায়ের মুক্তি এলো এমন ছেলের জন্য’, ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষের আরেকটি নাম মুজিবুর’, ‘শোন একটি মুজিবুরের থেকে লক্ষ মুজিবুরের ’, ‘যত দিন রবে পদ্মা, মেঘনা, গৌরি, যমুনা বহমান ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’ জনপ্রিয় এই গানগুলোর অংশ বিশেষ করে পরিবেশন করা হয়। এরপর ‘তুমি যে সুরের আগুণ ছড়িয়ে দিলে সবখানে’ এই রাবীন্দ্র সঙ্গীতটি পরিবেশন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শিল্পী সাজেদ আকবর। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘তোরা সব জয় ধ্বনি কর’ গানটি গেয়ে শোনান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী শাহীন সামাদ।
কবি নির্মলেন্দু গুণ ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ কবিতাটি পাঠ করেন । প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের লেখা আমার পরিচয় কবিতাটি আবৃত্তি করেন সংস্কৃতি মন্ত্রী, জনপ্রিয় অভিনেতা ও আবৃত্তিশিল্পী আসাদুজ্জামান নূর। একটি ভাওয়াইয়া গান পরিবেশন করেন অনিমা মুক্তি গোমেজ, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি গান পরিবেশন করেন সংসদ সদস্য ও সঙ্গিত শিল্পী মমতাজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আবদুল আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা, ১৫ আগষ্টের সকল শহীদ, জাতীয় চারনেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ এবং সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আজকে বাংলাদেশ স্বাধীন। এই স্বাধীনতা আমরা ২৩ বছরের সংগ্রাম এবং ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে আমরা অর্জন করেছি। জাতির পিতাকে হত্যার পর একাত্তরের পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মারা ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু আজকে ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অথচ কি দুর্ভাগ্য আমাদের এই ৭ মার্চের ভাষণ একসময় নিষিদ্ধ ছিল এই বাংলাদেশে। ৭ই মার্চেও ভাষণ বাজাতে গিয়ে আমাদেও বহু নেতা-কর্মী জীবন পর্যন্ত দিয়েছে। কিন্তুু আমি ধন্যবাদ জানাই কৃতজ্ঞতা জানাই সেই সকল মুজিব সৈনিকদের, শত বাধা উপেক্ষা করে দিনের পর দিন এই ভাষণ তারা বাজিয়ে গেছে। যত নিষিদ্ধ করেছে তত বেশি মানুষ জাগ্রত হয়েছে এবং এই ভাষণ তারা বাজিয়েছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর কোন ভাষণ এতদিন, এতঘন্টা বাজানো হয় আর মানুষ শোনে এটা আর কোনদিন হয়নি। কিন্তুু যতই তারা (ষড়যন্ত্রকারিরা) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম মুছতে চেয়েছে, যতই তারা এই ভাষণ বন্ধ করতে চেয়েছে ততই মানুষের ভেতরে যে উদ্দীপনা, স্বাধীনতার চেতনা যা ছিল তা কখনও মুছে ফেলতে পারে নাই। আমাদের দুর্ভাগ্য এই বাংলাদেশে যারা দেশের সাগরিক তারাই জাতির পিতাকে হত্যা করলো। তারাই এই ঐতিহাসিক ভাষণকে মুছে ফেলার চেষ্টা করলো। এই ভাষণকে নিষিদ্ধ করলো। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু করেছিল, যারা এই মাটিতে জন্মগ্রহণ করেনি। যাদের এই দেশের মাটির প্রতি কোন টানই কোনদিন ছিল না তারাই জাতির পিতার নাম মুছতে চেষ্টা করেছে তাঁর ভাষণ মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করলেও তা মুছে ফেলা যায় না। মুছে ফেলতে পারে নাই। আজকে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মাঝে মাঝে মনে হয় যারা একদিন এই ভাষণ বাজাতে বাধা প্রদান করেছে, যারা জাতির পিতার নাম মুছতে চেষ্টা করেছে। আজকে যখন ইউনেস্কো এই ভাষণকে তাঁর ঐতিহাসিক দলিলে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের কি এখন লজ্জা হয় না। তাদের কি এখন এতটুকু দ্বিধা হয় না। জানি না এদের লজ্জা-শরম আছে কি-না। কারণ, এরাতো পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর প্রেতাত্মা। স্বাধীন বাংলাদেশে থাকলেও তারা ঐ পাকিস্তানীদের লেজুড়বৃত্তি, তোষামোদী, চাটুকারের দল- তাই তারা ইতিহাস বিকৃতি করতে চেয়েছে। সেদিন অনেক নেতাই বাড়িতে এসেছিলেন, অনেক লম্বা লম্বা পয়েন্ট লিখে বাবার হাতে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে গেছেন, এই কথা বলতেই হবে, ওটা না বললে নয়। আজকে সেই দিন, বিষয়টি এমন যে, আজকে না বললে আর কখনও বলা যাবেনা। এরকম নানা পরামর্শ দিয়ে ব্যতিব্যস্ত, আমাদের বাসাতো সবার জন্য খোলামেলা, সকলে আসছেন আর পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন, নোট ধরিয়ে দিচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি ভাষণ বা সভার আগে মা, বাবাকে একটু চিন্তা করার সময় দিতে ঘুমাবার সুযোগ করে দিতেন। সেদিনও তিনি বঙ্গবন্ধুকে ডেকে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিতে বললেন। বাবার মাথার কাছে তিনি বসেছেন আর মা বেগম মুজিব খাটের পাশে একটা মোড়া নিয়ে বসেছেন। বেগম মুজিব বললেন অনেকে অনেক কথাই বলবে, এই মানুষদের জন্য তুমি সারাজীবন কষ্ট করেছো, তুমি জান কি বলতে হবে। তোমার মানুষদের যে কথাটা বলতে ইচ্ছা করবে সেই কথাটাই তুমি বলবে। কারো কথা শোনার দরকার নাই। সামনে বাঁশের লাঠি পেছনে অস্ত্র ঐ পাকিস্তানীরা অস্ত্র উঁচিয়ে আছে। বাংলার মানুষের ভাগ্য তোমার হাতে।
তাঁর মা কখনো প্রকাশ্য রাজনীতি না করলেও তার যে রাজনৈতিক চেতনা ছিল তা বাবার কাছ থেকেই অর্জিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তুু এই ৭ মার্চের ভাষণের সময় তিনি যে পরামর্শ দিয়েছিলেন আমি মনে করি এর থেকে শ্রেষ্ঠ পরামর্শ আর কিছুই হতে পারে না। ৭ মার্চের ভাষণকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর একটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র নায়ক-রাজনীতিবিদ,সামরিক-বেসামরিক নের্তৃবৃন্দ বিভিন্ন সময়ে ভাষণ দিয়েছেন । প্রত্যেকটি ভাষণ ছিল লিখিত। কিন্তুু ৭ মার্চের ভাষণই একমাত্র ভাষণ যার কোন লিখিত কপি ছিল না। হাতে কোন নোট-নির্দেশিকা কিছুই ছিল না। এটা ছিল সম্পূর্ণই একটা উপস্থিত বক্তিতা।
বঙ্গবন্ধু তনয়া বলেন, সারাটা জীবন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্দোলনে যে সংগ্রাম তিনি করেছেন (বঙ্গবন্ধু)। সেই ভাষা আন্দোলন থেকে ধাপে ধাপে স্বাধীকার আন্দোলন, নির্বাচনে জয়ী হওয়া এরপর মুক্তিযুদ্ধ। সেই যুদ্ধে কি করতে হবে-প্রতিটি কথা তিনি এই ভাষণের মধ্যদিয়ে বলে দিয়েছিলেন। প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়তে বলেছিলেন,যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুুত থাকতে বলেছিলেন, এমনকি এভাবেও বলেছিলেন ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি রাস্তা-ঘাট সব বন্ধ করে দিবে। কারণ তিনি জানতেন কি ঘটতে পারে। জাতির পিতার এই ভাষণে বাংলার ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস এবং পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশণা ছিল উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, কি দুর্ভাগ্য এদেশের যে, এই দেশের নাগরিক ২১টা বছর দেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামের ইতিহাস জানতে পারেনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগের ইতিহাস জানতে পারেনি। যে প্রজন্মেও পর প্রজন্ম এসব জানতে পারেনি তাদের মত দুর্ভাগ্য আর কারো হতে পারে না। আমি আশা করবো- এই স্বীকৃতি শুধু স্বীকৃতিই নয়, ইতিহাসও প্রতিশোধ নেয়, ইতিহাসও সত্যকে তুলে ধরে। যতই তা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হোক ইতিহাস তার সত্য অবস্থানটা অবশ্যই তুলে ধরবে। আজকে সেই স্বীকৃতিই বাংলাদেশ পেয়েছে। শুধু এই ভাষণ নয়, সমগ্র বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি, সকল শহীদ, সকল মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি সকলেই আজকে সম্মানিত হয়েছে বিশ্বদরবারে এই ভাষণের স্বীকৃতির মধ্যদিয়ে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটাই অনুরোধ থাকবে আর যেন কখনই ঐ পাকিস্তানী প্রেতাত্মা, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর পদলেহনকারি, তোষামোদী, চাটুকারের দল-যেন এই বাংলার মাটিতে ইতিহাস বিকৃতি করার সুযোগ না পায়। তার জন্য সমগ্র বাংলাদেশের মানুষকে জাগ্রত হতে হবে। স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি ক্ষমতায় থাকলে একটা দেশের যে উন্নতি হয়, মানুষের যে উন্নতি হয় সেটাতো আমরা প্রমাণ করেছি। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই এদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে। যে দেশের মানুষকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হতো আজকে সেই ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে আর আমাদের কারো দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় না। আমরা আজ নিজস্ব বাজেটের শতকরা ৯৮ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করতে পারি। সে সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন এদেশের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। অর্থনৈতিক মুক্তি নিয়ে আসতে, সাংস্কৃতিক অধিকার অর্জন করতে। বাঙালি হিসেবে আমাদের ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতি- আমাদের যা কিছু আছে তা আমরা সমগ্র বিশ্বের বুকে সমুন্নত করতে পেরেছি। রাষ্ট্রভাষার জন্য জীবন দিয়েছে বাঙালি, আজকে তাই ইউনেস্কো স্বীকুতি দিয়েছে আমাদের ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস হিসেবে। আর জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই সারাবিশ্বে আমরা গর্বিত জাতি। কিন্তুু এই গর্বিত উন্নত শির যেন আর তখনও পদানত না হয় সেভাবেই সমগ্র বাঙালি জাতির নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে। এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে। ইনশাল্লাহ, আমরা এই দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো- ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। বাঙালি জাতি আজকে যে মর্যাদা পেয়েছে সেই মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত থেকেই এগিয়ে যাবে। আজকে এই নাগরিক সংবর্ধনায় সেটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। আজ আমরা সেই প্রতিজ্ঞাই নেব মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করবো।