বগুড়ায় বিদ্যুত সংযোগের নামে দরিদ্রদের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ
বগুড়া জেলা প্রতিনিধি, আবদুল ওহাব, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : প্রতিটি বাড়ীতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার লক্ষ্যে সরকার বিনামূল্যে “শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়ন প্রকল্প” হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের আলাচন্ডি পাড়া এবং সারিয়াকান্দী পাড়ায় চলছে বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম। সরকারী অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলেও ঐ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে প্রায় অর্ধশত প্রতিটি হত দরিদ্র পরিবারের নিকট থেকে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি দালাল চক্র।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক শ্রেণির দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী, কতিপয় ইলেক্ট্রিশিয়ান ও অসাধু ঠিকাদারদের যোগসাজসে দালালদের একটি চক্র গ্রামের সহজ সরল গ্রাহকদের কাছ থেকে কৌশলে ওইসব টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, আলাচন্ডি পাড়া ও সারয়িাকান্দী পাড়ার লোকজন অত্যান্ত হত দরিদ্র। কেউ ভিক্ষুক, কেউ দিনমজুর কেউবা রিকশা চালক ও কুলি। তারা জানায়, ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা দিতে পারলে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হবে। গেল ১ বছর আগে থেকে এমন প্রচারনা চালায় উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোঃ শুকুর আলী ও তার সাথের লোকজন। শকুর তাদের জানিয়েছিল,, পল্লী বিদ্যুত-২ এর সহ সভাপতি ও উপজেলার রাণীর হাট কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আবু জাফর আলী এর সাথে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। বিধায় টাকা দিলে বিফলে যাবেনা। কথাগুলো বিশ্বাস করে তারা বিভিন্ন এনজিও থেকে কিস্তিতে টাকা উত্তোলন করে শুকুর আলীর হাতে দেয়। এভাবে চক্রটি প্রতিটি হত দরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে মিটার প্রতি ১০-১১ হাজার টাকা বিভিন্ন কিস্তিতে হাতিয়ে নেয়।
গ্রাহক সালাম, রবিউল, সোবহান, হান্নান, ও আয়নাল জানান, তাদের কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে ঈদের আগে মিটার দিবে বলে। কিন্তু ঈদের পর প্রায় দেড় মাস চলে গেলেও আজও মিটার দেয়া হয়নি। একই অভিযোগ ওই এলাকার দুখু মিয়া, মমিন, মুছা, মহিদুল সহ অনেকের। তারা আরও জানান, টাকাগুলো বিভিন্ন এনজিও এবং লাভের উপরে নেয়ায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে অতি দুঃখে কষ্টে। কিন্তু টাকা দেয়ার পর তারা জানতে পেরেছে প্রকল্পটি বিনামুল্যে প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন করছেন। তথাপি এ সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হলেন।
এ সম্পর্কে আশেকপুুর ইউপি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শুকুর আলীর নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, গ্রাহক টাকা দিলে আপনাদের অসুবিধা কোথায় ? এদিকে বিদ্যুত সংযোগের নামে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শুকুর আলীর মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিয়ে বগুড়া পল্লী বিদ্যুত সমিতি -২ এর সহ সভাপতি ও উপজেলার রাণীর হাট কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আবু জাফর আলীর নিকট জানতে চাইলে শুকুর আলী তার পরিচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যুত সংযোগ নিতে কিছু টাকা খরচ হতে হয়, সেজন্য হয়তো কিছু লাগতে পারে। তবে টাকা গ্রহন করেনি বলে জানান।
এদিকে বগুড়া পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ জিএম জানান, সরকার প্রতিটি বাড়ীতে বিদ্যুত সংযোগ প্রদানের লক্ষ্যে“শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রকল্প” বিনামুল্যে ঐ এলাকায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এমতাবস্থায় সরকার বিনামুল্যে বিদ্যুত সেবা দেয়া সত্বেও তা থেকে জনগনকে বঞ্চিত ও সরকারের ভাবমুর্তী ক্ষুন্ন করে হত দরিদ্রদের নিকট থেকে ১০-১১ হাজার টাকা আদায় করায় ওই চক্রটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন অতি প্রয়োজন বলে মনে করেন এলাকার সাধারন জনগন।