বগুড়ায় দর্জি শ্রমিকদের ধর্মঘটঃ তবুও সচল কারখানা
বগুড়া প্রতিনিধি, এম নজরুল ইসলাম, ৩১ মে, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪): পোশাক তৈরীর কাজ করতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। বগুড়া জেলার শাজাহানপুর, সারিয়াকান্দি, শেরপুর, সোনাতলা, শিবগঞ্জ, কাহালু, আদমদীঘি, নন্দীগ্রাম, ধুনট, গাবতলী ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার শতশত দর্জি বাড়িতে গ্রাহকদের আনাগোনা বেড়েছে।
তবে বগুড়া সদরের চিত্র এবার উল্টো। ঈদের ভরা মৌসুমে বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে মালিক পক্ষের সঙ্গে কোনো বৈঠক না করেই হঠাৎ করে শ্রমিকদের ডেকে কাজে যোগ দিতে নিষেধ করেছেন শহরের দর্জি-শ্রমিক নেতারা। মালিকরা বলছেন, দাবির বিষয় নিয়ে আমাদের সঙ্গে বসতে চেয়ে নেতারা বসেনি। উল্টো শ্রমিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করে কারখানায় যেতে দেয়া হচ্ছে না। এমন অভিযোগ মালিকপক্ষের।
এদিকে, শহরের মানুষ নতুন জামা-কাপড় থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। অনেকেই আবার দর্জি বাড়ি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এতে দর্জিদের কদর কমছে। তবে সমিতির বাহিরে থাকা জেলার অন্যান্য উপজেলার দর্জি বাড়িতে চলছে ঈদ ব্যস্ততা। গজকাপড় আর দর্জি বাড়িতে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ারমত। ধর্মঘট লেগে আছে শুধু শহরেই।
জানা গেছে, বগুড়া শহরে দর্জি শ্রমিকদের ধর্মঘটে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে টেইলার্স মালিকদের। চলতি মাসের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হওয়া প্রথম দফা এই ধর্মঘট চলে ২৬ মে পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে কোনো সমাধান না হওয়ায় রোবাবার আবারো শ্রমিক নেতারা শহরের খোকন পার্কে একত্রিত হয়ে ধর্মঘটের সময় বৃদ্ধি করেন। এই ধর্মঘট চলবে ১লা জুন পর্যন্ত। এতে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন মালিকরা। বগুড়া জেলায় দর্জি দোকান মালিক সমিতির আওতায় আছেন ৩০৩৪ জন মালিক।
অভিযোগ রয়েছে, মালিকদের জিম্মি করে অনেক সময় মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। কমিটির সদস্যরা শ্রমিকদের দিয়ে ধর্মঘট করে মালিকদের কাছে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে। নেতারা মূলত শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য কিছুই করে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু শ্রমিক বলেছেন, নেতাদের কথা অমান্য করে কাজে যোগ দিলে বাড়ি থেকে তুলে এনে মারধর করবে নেতারা। সেই ভয়েই কেউ কাজে যেতে সাহস পাচ্ছে না। গত ১৫ তারিখ থেকে কারখানা বন্ধ আছে। মানুষ কাপড় তৈরি জন্য এসে ফেরত যাচ্ছে।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে ধর্মঘট আওতার বাইরে থাকা জেলার বিভিন্ন উপজেলার মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় এখন লক্ষণীয়। নারী ক্রেতারা তাদের পছন্দের ডিজাইনের পোশাক তৈরি করতে ছুটছেন গজকাপড় আর দর্জি বাড়িতে। জেলা শহরে দর্জি শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে মজুরি অনেক বেশি বলে অনেকে আবার তৈরি পোশাক কিনতেও আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
সবাই চাইছে ঈদের ভিড় বাড়ার আগেই পছন্দের কাপড় কিনে ফেলতে। দিন যাচ্ছে ভিড় বাড়ছে। ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়ের জন্যই সারাবছর অপেক্ষা করে থাকেন দোকানিরা। এ বছরও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ঈদের বাজার ঘুরে দেখা গেল অন্য সব দোকানের চেয়ে গজ কাপড়ের দোকানগুলোতেই এখন ভিড় বেশি।
দোকানিরা বলছেন, ঈদের কেনাকাটা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে। কারণ, ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে, তত মজুরি বাড়বে। তাছাড়া এখন অনেক দর্জিই অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।