বগুড়ায় ঝড় বৃষ্টিতে কৃষকের স্বপ্ন বিপর্যয়ের শঙ্কা
বগুড়া প্রতিনিধি, এম নজরুল ইসলাম, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪): বৈশাখ মাসের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বগুড়ায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার আশংকা রয়েছে। টানা ঝড়ে আতঙ্কে পড়েছেন কৃষকেরা। কেউ ধান কাটছেন, কেউ কাঁদছেন। বৃষ্টির পানিতে ফসল তলিয়ে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলার ১২ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৭০ মেট্রিক টন। টানা বৃষ্টির কারণে জমির পাকা আধাপাকা ধান গাছ পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া ঝড়ো বাতাসে বিভিন্ন এলাকায় ধান গাছ মাটির সাথে মিশে গেছে। ধান মাটিতে শুয়ে পড়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানের বেশ ক্ষতি হয়েছে। তাই কৃষকরা আতঙ্কে জমির কাঁচা-পাকা ধান কর্তন শুরু করেছেন।
রোববার সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকের স্বপ্ন যেন গুড়েবালি হয়েছে কালবৈশাখী ঝড়ে। ধান পরিপুষ্ট হয়ে পাকার আগেই মাটিতে পড়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই ধান কাটতে হচ্ছে কৃষকদের। সময়ের আগে ধান কাটার ফলে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তারা। আবহাওয়ার এ অবস্থায় একই সঙ্গে মাঠে ফসল কাটা শ্রমিকেরও সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে বেশি দামে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে কৃষকদের।
নন্দীগ্রাম উপজেলা সদরের দামগাড়া মহল্যার কৃষক আব্দুল ওয়াহাব ও কৈগাড়ী গ্রামের ওমর আলী জানান, এ উপজেলার বেশির ভাগ জমিতে আগাম জাতের ধানের চাষ করা হয়েছে। ধান কাটতে এখনো ১০/১৫ দিন বাকি। বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এতে ফলন বিপর্যয়সহ প্রতি বিঘায় প্রায় চার/পাঁচ মণ ধান কম হবে। এতে লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অফিসার মুহা. মুশিদুল হক বলেন, ঝড়ো বাতাসের কারণে কিছু পরিমান জমিতে বোরো ধান হেলে পড়েছে। ফলন বিপর্যয়ের কথা এখুনি বলা যাবে না। আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। আগাম সতর্কতা হিসেবে যেসব জমির ফসল শতকরা ৮০ ভাগ পেকে গেছে, সেগুলো দ্রুত কেটে নেয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতেই ফলন বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব।
এদিকে, আদমদীঘি উপজেলায় প্রবল ঝড়ে মাঠের পর মাঠ ইরি-বোরো ক্ষেতে থাকা কাঁচা ও আধা পাকা ধানগাছ শুয়ে পড়েছে মাটিতে। এতে করে ফলন বিপর্যয় ঘটবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষকরা।
শিলাবৃষ্টিতে সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর, সদর ইউনিয়ন, নারচী ও পৌরসভাসহ কাজলা, কর্নিবাড়ী, ফুলবাড়ী ও বোহাইল ইউনিয়নের ৩০১ হেক্টর ইরি-বোরো ধান, ২১ হেক্টর পাট ও দেড় হেক্টর জমির সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার শাহাদুজ্জামান বলেন, ৬১৫ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এতে করে টাকার মূল্যে প্রায় চার কোটি ৬২ লাখ টাকার ফসল সম্পুর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার বলেন, এখন বোরো ধান পাকা ও শক্ত অবস্থায় আছে। আশা করা যায় ফলনে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।