ফরিদগঞ্জে সংখ্যালঘুর ঘরে আগুন লাগার বিষয়টি রহস্যজনক!
৭২ ঘন্টার মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমার নির্দেশ
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি, কামরুজ্জামান, ২০ অক্টোবর, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ীর একটা পরিত্যাক্ত ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ১৯ অক্টোবর মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩ টার দিকে উপজেলার ৬ নং ইউনিয়নের গুপ্টি কর্মকার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ধারনা করা করা হচ্ছে ঘরে আগুন লাগানো হয়েছে। তবে আগুন লাগানোর বিষয়টি রহস্যজনক।
বাড়ীর লোকজন জানায়, আমাদের আত্মিয় এবং প্রতিবেশী বীরেশ্বর কর্মকার (৬০) স্ত্রী, ২ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে জীবিকার তাগিদে চাঁদপুর সদরে বসবাস করেন। বাড়ীর ঘরটি তালাবদ্ধ এবং পরিত্যাক্ত অবস্থাতেই থাকে। খুব একটা বাড়ীতে আসেন না ঘরটি মেরামতও করা হয় না।
বীরেশ্বর কর্মকার বলেন, কাজের চাপে খুব একটা বাড়ীতে আসা হয় না। এবারের পুজাতেও বাড়ীতে আসিনি। ভোর রাতে ফোনে খবর পাই ঘরে আগুণ জ্বলছে, তাড়াতাড়ী ছুটে আসি। ঘরে বিদ্যুৎ বা অন্য কোন কিছু থেকে আপনা আপনি আগুন লাগার সম্ভাবনা নাই। কেউ আমার ঘরে আগুন দিয়েছে। আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বাড়ীর উত্তম কুমার, গৌরাঙ্গ কর্মকারের ছেলে হৃদয়, নারায়ন কর্মকারের বিধবা স্ত্রী রাধারানী জানায়, ভোর তিনটার দিকে ডাক চিৎকার এবং আগুনের শিখা দেখে ভয় পেয়ে যাই। আমরা বাড়ীর লোকজন এবং আশপাশের বাড়ীর লোকজন এসে সহযোগিতা করলে আগুন নিভাতে সক্ষম হই। আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরের লোকজন চাঁদপুর কামার শীল্পের কাজ করে। ঘরটি তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল।
স্থানীয় ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গণি বাবুল পাটওয়ারী জানান, খবর পেয়েই ভোর বেলা ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। কর্মকার বাড়ির বিরেশ্বরের পরিত্যাক্ত তালা বদ্ধ ঘরটি আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মন্দির ঘর থেকে বেশ কিছুটা দুরে। কিভাবে আগুনের সূত্রপাত হলো বলা যাচ্ছেনা। তবে ফায়ার সার্ভিস এসে দেখার পর তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। জেলা প্রশাসক মহোদয়, পুলিশ সুপার মহোদয় সহ ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসেছেন, সরেজমিন তদন্ত করে দেখছেন।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো: শহিদ হোসেন জানান, ঘরের মালিক থেকে অভিযোগ পেয়েছি। তিনিও আগুন লাগার বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না। বাড়ীর অন্যান্য লোকদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে সন্দেহ করলেও কেউ কিছুই দেখেনি বলে জানিয়েছে। আগুনের সূত্রপাতের বিষয়টি এখনই বলা যাচ্ছেনা। নাাশকতা কিনা আমরা খতিয়ে দেখছি। ইতিমধ্যে ফায়র সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগ আগুনের সূত্রপাতের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে দেখে গেছেন। তদন্ত স্বাপেক্ষে এবং উনাদের নির্দেশে আমরা কাজ করবো। জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস ও জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ পিপিএম বার মহোদয় বিষয়টি নিয়ে কেউ যেন অযথা কোন বিভ্রান্ত না ছড়ায় এবং অযথা কোন বিবাদে লিপ্ত না হয় সে বিষয়ে সকলকে অনুরোধ করে গেছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আগুনের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছে তা তদন্ত করে জানার জন্য ইউএনও, ইউপি চেয়ারম্যান, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ অফিস ও হিন্দু কমিউনিটির একজনকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ আছে। রিপোর্টের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য সাংবাদিক সফিকুর রহমান আগুনে পুড়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশাসনকে সঠিক তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি মুঠো ফোনে প্রতিনিধিকে জানান, বীরেশ্বর কর্মকারের ক্ষতির জন্য সমবেদনা জানাই। সরকারীভাবে সহযোগিতার চেষ্টা থাকবে। তবে সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলার জন্য কেউ যেন কোন অপচেষ্টা না করে।