ফরিদগঞ্জে বাল্যবিয়ে পড়াতে রাজি না হওয়ায় পুলিশ সদস্যের হাতে ইমাম লাঞ্ছিত
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি, কামরুজ্জামান, ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : ফরিদগঞ্জের বাল্যবিয়ে পড়াতে রাজি না হওয়ায় এক পুলিশ সদস্যের হাতে মসজিদের ইমাম লাঞ্ছিত হওয়ার পর থানায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) কাজী আব্দুল রহিম।
এ সময় তিনি ঘটনার বিষয়ে এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলেন এবং ওই দিনকার ঘটনার বিষয়ে অবহীত হন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সাথে ইমামকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় গতকাল সোমবার পাইকপাড়ায় ঘটনাস্থলে উপজেলা ইমাম সমিতি এবং ইসলামী ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাসহ প্রায় ৮০ জন ইমাম ঘটনাস্থলে যান। তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ বিচার দাবী করেন।
ঘটনার ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহিদ হোসেন জানান, ইমামকে চড়ধাপ্পড়ের ঘটনায় এলাকার বীরমুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদ থানায় অভিযোগ দায়ের করে। সেটিকে জিডি হিসেবে গ্রহণ করে ৪ জনের বিরুদ্ধে প্রশিকিউশন দিয়ে আদালতে প্রেরণ করেছি। পুলিশ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল ডিএমপিতে চাকুরি করেন বলে জানা গেছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্যা ইয়াছমিন আক্তার জানান, ইমাম সাহেবকে চড়ধাপ্পড়ের ঘটনাটি আমি দেখিনি, তবে এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে আসা এলাকার কিছু লোকজনের উপর হামলার ঘটনাটি দেখেছি। আলম ও জাহাঙ্গীর ক্ষুব্ধ হয়ে এই হামলা করে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) পাইকপাড়ায় বাল্যবিয়ে পড়াতে রাজি না হওয়ায় এক পুলিশ সদস্যের হাতে মসজিদের ইমাম লাঞ্ছিত হয়। ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার পুলিশ সদস্য দুলালের ভাই জাহাঙ্গীরের মেয়ের বিয়েতে মসজিদের ইমাম আবুল কালাম আজাদকে বিয়ে পড়ানোর জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাল্য বিয়ে পড়াতে অস্বিকৃতি জানালে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ইমামকে শারিরীক ভাবে লাঞ্ছিত করেন। প্রতিবাদকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদ, মাওলানা আবু জাফর, গোলাম কিবরিয়া, শাহাদাৎ হোসেন, নেছার পাঠানসহ বেশ কয়েকজন মুসল্লী আহত হন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মসজিদ কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার সাদাত বলেন, দুলাল এবং তার ভাইয়েরা বরাবরই উগ্র। দুলাল নিজেকে পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে এলাকার মানুষকে শাসিয়ে বেড়ায়। তার ভাই আলমগীর মার্শাল কোর্টে শাস্তি প্রাপ্ত হয়ে চাকুরীচ্যুত হয়েছেন।
তিনিও নিজেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর লোক বলে জাহির করে বেড়ান। শুক্রবার তারা মারধর করে তারাই আবার থানায় অভিযোগ করেছেন। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের কাজী মো. শাহ্ আলম বলেন, আমি নিকাহ রেজি: করতে গিয়েছি, মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়সের বিধায় নিকাহ্ রেজি: না করেই চলে এসেছি। মেয়ের জন্ম তারিখ আমার দেখা মতে ২০০৪ সালে।
পুলিশ সদস্য দুলাল ও তার পরিবারের লোকদের বাঁচাতে একটি চক্র ঘটনার স্বীকার ইমামসহ অন্যান্যদের জামায়েতে ইসলামের সদস্য বানানোর অপচেষ্টা করছেন বলে জানা যায়।
এদিকে ঘটনার ব্যাপারে মোস্থাফিজুর রহমান দুলাল জানান, ঘটনার ব্যাপারে তারা মিমাংসা করার চেষ্টা করছেন। সোমবার সন্ধ্যায় এলাকায় বৈঠক হবে।