পাসপোর্ট কর্মকর্তার প্রতারণার বিয়ে, ফাঁদে বগুড়ার পারভীন
বগুড়া প্রতিনিধি, এম নজরুল ইসলাম, ২৬ মে, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪): স্বামী পরিত্যক্তা নারী পারভীন (ছদ্দনাম)। একটু সুখের আশায় খোরশেদ আলম নামের এক পাসপোর্ট কর্মকর্তাকে বিয়ে করেন। কিন্তু বিধিবাম ! সেই সুখটিও হারিয়ে গেল প্রতারণার জালে। পূর্বের স্ত্রী সন্তান ও শুধুমাত্র নিজের নাম ঠিক রেখে মিথ্যা পরিচয়ে বিয়ে করে।
এরপর বগুড়া শহরের জহুরুল নগর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সংসার ভালোই চলছিল। তাদের দাম্পত্য জীবনে পারভীন অন্তসত্বা হয়। এতেই সুখের সংসারে ভাঙন সৃষ্টি শুরু হয়। বদলী নিয়ে বগুড়ার পারভীনকে ফেলে লাপাত্তা অভিযুক্ত স্বামী বগুড়ার পাসপোর্ট অফিসের সাবেক সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম।
বর্তমানে তিনি মাগুরা জেলায় কর্মরত। পারভীনের খোঁজ পর্যন্ত রাখেননি প্রতারক স্বামী। উল্টো প্রতারিত নারীকেই হুমকির মধ্যে রাখা হয়েছে। বেশকয়েকবার পারভীনকে হত্যার চেষ্টা করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাসপোর্ট কর্মকর্তা খোরশেদ আলমের বিচার চেয়ে গত ২০/০২/১৮ ইং তারিখে মাগুরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পাসপোর্ট অধিদপ্তর মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন প্রতারিত ওই নারী। এছাড়া স্বামীর হুমকি ধামকির বিষয়ে গত ৭ মার্চ বগুড়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি নং ৫০৬) করা হয়েছে।
অভিযোগে ওই নারী উল্লেখ করেন, তিনি স্বামী পরিত্যক্তা এবং দুই সন্তানের জননী। বগুড়া পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় খোরশেদের সাথে পারভীনের পরিচয় হয়। দেখাদেখির একপর্যায়ে খোরশেদ নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে পারভীনের সরলতার সুযোগ নেয়। পারভীনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় খোরশেদ। অবিবাহিত জেনে সুখের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে পারভীন। পাসপোর্ট কর্মকর্তার প্রতারণার ফাঁদে পা দেয় ওই নারী।
পরে মুসলিম শরীয়তের বিধান মতে ও বগুড়া সদরের শেখেরকোলা কাজী অফিসের মাধ্যমে (রেজি: এ, বহি- ৩/১৬) ৫০ হাজার টাকা দেন মোহরে কাবিননামা মূলে ২০১৬ সালের ২ জুন পারভীনকে বিয়ে করে খোরশেদ। নিজের পিতার নাম ও ঠিকানা গোপন রাখে ওই প্রতারক। তবুও বিশ্বাস রেখে শহরের জহুরুল নগরে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার শুরু করে। দাম্পত্য জীবনে পারভীন অন্তসত্বা হয়। হঠাতই বগুড়া থেকে মাগুরা জেলায় বদলী হয়ে যান ওই পাসপোর্ট কর্মকর্তা।
এরপর থেকেই পারভীনের সাথে স্বামী খোরশেদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। স্বামীর খোঁজে ওই নারী মাগুরা জেলার পাসপোর্ট অফিসে ছুটে যান। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে খোরশেদ। গালিগালাজ, হুমকি ধামকি দিয়ে পারভীনকে পাসপোর্ট অফিস থেকে বিদায় করে দেয়।
প্রতারণার শিকার পারভীন জানান, আমি মাগুরায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জেনেছি ‘আমার স্বামীর পূর্বের দু-তিনটি স্ত্রী আছে। পৃথক পৃথক সংসার ও তাদের সন্তান রয়েছে। বিষয়টির সত্যতা জানতে চাইলে খোরশেদ উত্তর দেয়নি। কিছুদিন পর পারভীনকে ফোন করে নিজের অসুস্থতার কথা জানায় খোরশেদ। এটাও ছিল ফাঁদ। গত ১২/০২/১৮ ইং তারিখে স্বামীর টানে আবারো মাগুরা পাসপোর্ট অফিসে ছুটে যায় পারভীন। সেদিন ওই নারীকে বেধরক মারপিট করে।
এতে গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়। পারভীন আত্মহত্যার হুমকি দিলে আতঙ্কে পড়ে খোরশেদ। এরপর কৌশলে রাতের আঁধারে রাজশাহীতে পদ্মার পাড়ের কয়েক মাইল দূরে নির্জনস্থানে নিয়ে পারভীনকে খুন করার চেষ্টা করা হয়। বর্তমানে স্বামীর স্বীকৃতি ও প্রতারক খোরশেদের বিচার দাবিতে বিভিন্ন মহলে ঘুরছেন প্রতারিত ওই নারী।
এপ্রসঙ্গে অভিযুক্ত পাসপোর্ট কর্মকর্তা খোরশেদ আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিয়ের কথা স্বীকার করে অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় নিউজ করে কি’ ছিঁড়বেন। ওই নারীর মধ্যেই সমস্যা। বগুড়া চাকুরিকালে আমি অফিসে থাকার সুযোগে একাধিক অপরিচিত পুরুষ বাসায় আসা-যাওয়া করতো। আমি নই, ওই নারীই আমার সাথে প্রতারণা করেছে।