নোয়াখালী শিশু বলাৎকারের মিথ্যে ঘটনা সাজিয়ে ‘মাদ্রাসা শিক্ষক নির্যাতন

নোয়াখালী প্রতিনিধি, বিধান ভৌমিক ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : নোয়াখালী চাটখিল উপজেলা নোয়াখলা ইউনিয়নে শিশু বলাৎকারের নাটক সাজিয়ে ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে ফাঁসানো হয়েছে এক মাদ্রাসা শিক্ষককে। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক চাটখিল পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড ধামালিয়া এলাকার আবুল কাশেম এর ছেলে মাওলানা আবুল কালাম (৩০)।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ৪ বছর যাবৎ ভুক্তভোগী শিক্ষক মাও. আবুল কালাম একাই মারকাজুল কুরআন মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনা করে আসছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে এতিম ও অসহায় শিক্ষার্থীদের কুরআন ও ইসলামিক জ্ঞান বিতরণ করানো হতো।
আবাসিক-অনাবাসিক এই প্রতিষ্ঠানে বিত্তবানদের থেকে বেশ কিছু দান-অনুদান আসতে শুরু করছিল। কিন্তু স্থানীয় মসজিদ কমিটির লোকজন ও প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিদেরকে অত্র প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি না করার জেরে মাদ্রাসা উচ্ছেদের পরিকল্পনা সাজায় ষড়যন্ত্রকারীরা। এক পর্যায়ে গত ২রা জুন তারা দলবদ্ধ হয়ে মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র মো. মাকসুদুল ইসলাম সাফিন (১০)কে নিয়ে শিশু বলাৎকার কান্ড সাজিয়ে নিরীহ এই শিক্ষককে বেঁধে দিনভর অমানবিক নির্যাতন করে এবং মুহুর্তের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানের থাকা সমস্ত আসবাবপত্র-মালামাল ও টাকা-পয়সা লুটপাট করে নিয়ে যায় দূর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে চাটখিল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। আরো জানা যায়, এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ডরা মারকাজুল কুরআন মাদ্রাসার পরিচালককে উচ্ছেদের কিছুদিন পর তালতলা বাজারে আরেকটি মাদ্রাসা তৈরি করে।
মামলার বাদী রুমি আক্তার জানান, আমার ছেলে ও মাদ্রাসার শিক্ষককে ঘিরে যে ঘটনা রটানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাদের মধ্যে এধরণের কোনো কিছুই ঘটে নি। আমার অনুপস্থিতিতে আমার ছেলেকে থানায় নিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও কিছু কথা শিখিয়ে এসব কাহিনি সাজানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত ২রা জুন ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বিষয়টি জানতে পেরে থানায় যাই। আমার ছেলেকে ছেড়ে দিবে মর্মে পুলিশ ও কিছু লোকজন আমার থেকে একটি কাগজে সাক্ষর নেয়। কিন্তু তারপরেও আমার ছেলেকে একরাত আটকে রেখে পরদিন কোর্টে পাঠায় পুলিশ। মামলা হওয়ার বিষয়ে কিছুই জানতাম না। কিছু লোকজন ষড়যন্ত্র করে এসব করিয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষকের স্ত্রী জানায়, একটা মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে নির্মম আঘাত ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে আমার নিরপরাধ স্বামীকে জেলে পাঠানো হয়। এনজিও থেকে লোন নিয়ে, আমার গহনা বিক্রি করে মাদ্রাসাটি গড়ে তোলেন তিনি। কিন্তু দুষ্কৃতিকারীরা এক নিমিষেই সব শেষ করে দিল! ছোট্ট দুই সন্তান নিয়ে আমরা খুবই মানবেতর জীবন-যাপন করছি। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি যাতে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে, চাটখিল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ ইমদাদুল হক জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি তখন জানতে পারি। পরে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঐ শিক্ষককে উদ্ধার করে। ভয়-ভীতি দেখিয়ে মামলা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, মামলাটি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *