নোয়াখালী বাসায় ঢুকে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার দায় স্বীকার আলতাফের
নোয়াখালী প্রতিনিধি, বিধান ভৌমিক, ১৫ জুন, ২০২৩ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : নোয়াখালীল সদর উপজেলায় বাসায় ঢুকে মা-মেয়েকে নৃসংশভাবে কুপিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে প্রেমিক আলতাফ হোসেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো.শহীদুল ইসলাম।
তিনি জানান, বুধবার সন্ধ্যার দিকে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নং আমলি আদালতের বিচারক এস.এম মোসলেহ উদ্দিন মিজানের আদালতে মা-মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে আসামি আলতাফ। সে জানায়, নূর নাহার বেগমের সাথে টাকা নিয়ে টানা পোড়েনের কারণে প্রথমে নুর নাহারকে কুপিয়ে হত্যা করে, পরে তার মেয়ে ফাতেহা আজিম প্রিয়ন্তীকেও (১৬) হত্যা করে।
এসপি জানায়, এ ঘটনায় সুধারাম মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। যাহার মামলা নং-১৫। আসামিকে আদালতে হাজির করলে সে মামলার ভিকটিম নূর নাহার বেগম (৩৫) ও তাহার মেয়ে ফাতেহা আজিম প্রিয়ন্তী (১৭) কে ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করে বলে আদালতে স্বীকার করে।
দোষ স্বীকার করে আসামি আলতাফ হোসেন আদালতে জানান, ভিকটিম নূর নাহার বেগমের সাথে তার ওমান থাকা অবস্থায় রং নম্বরে পরিচয় হয় এবং ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরী হয়। এক পর্যায়ে ভিকটিম নুর নাহার বেগম আসামিকে ভিসা বাতিল করে বাংলাদেশে এসে হোটেল ব্যবসা করার জন্য বলে। তার কথায় আসামি গত ৮জুন বাংলাদেশে এসে দত্তের হাট এলাকার মাসুদ নামে এক ব্যক্তির মেসে উঠে। এরপর ১০ জুন সাড়ে ১০টার দিকে নূর নাহারের বাসায় গিয়ে তার সাথে দেখা করে। পরদিন ১১জুন পুনরায় ভিকটিমের বাসায় গিয়ে ভিকটিম নুর নাহারের কাছে প্রতিশ্রুতিকৃত ৩ লাখ দাবী করে। তখন ভিকটিম ২/১ দিনের মধ্যে টাকা দিবে বলে জানায়। পরের দিন আসামি নুর নাহারের বাসায় গেলে বাসার তালা বন্ধ পায়। বুধবার ১৪ জুন বেলা সাড়ে ১০টার দিকে আসামি ভিকটিম নূর নাহারের বাসায় গিয়ে আবারো ৩ লাখ টাকা ভিকটিমের নিকট দাবি করে। ওই সময় ভিকটিম টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আসামির সাথে তার বাকবিতন্ডা শুরু হয় এবং ভিকটিম একপর্যায়ে আসামিকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এরপর পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানোর ভয় দেখালে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। ওই সময় আলতাফ তার পকেটে থাকা ছুরি ভিকটিম নূর নাহারের গলায় ধরে আঘাত করলে ভিকটিম শোরচিৎকার করে তাহার মেয়ের রুমে চলে যায়। ওই সময় ভিকটিমের মেয়ে ফাতেহা আজিম প্রিয়ন্তী ঘুম থেকে উঠে মাকে বাঁচানোর জন্য মায়ের পিঠের উপর পড়লে আসামি তাকেও এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। ভিকটিম নুর নাহার বেগম আসামির সাথে প্রতারণা করায় তাকে হত্যা করে, তবে তাহার মেয়ে ফাতিহা আজিম প্রিয়ন্তীকে হত্যা করার ইচ্ছা আসামির ছিল না। উল্লেখিত জবানবন্দি আসামি স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে প্রদান করে।
প্রসঙ্গত, বুধবার ১৪ জুন বেলা সাড়ে ১০টার দিকে নোয়াখালী পৌরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ডের গুপ্তাংকের বার্লিংটন মোড় সংলগ্ন কচি মিয়ার বাসার দ্বিতীয় তলায় ঢুকে এই হত্যাকান্ড ঘটনায় ওমান প্রবাসী আলতাফ।গ্রেফতারকৃত আলতাফ হোসেন (২৮) লক্ষীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল মুনাফের বাড়ির মৃত আবুল কালামের ছেলে। নিহতরা হলেন, নোয়াখালী পৌরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ডের ফজলে আজিম কচি মিয়ার স্ত্রী নূর নাহার বেগম ও তার মেয়ে হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ফাতেমা আজিম প্রিয়ন্তী।