নীলফামারী সেচ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ফসল থেকে বঞ্চিত কৃষক
নীলফামারী প্রতিনিধি, মো. শাইখুল ইসলাম সাগর, ১৭ আগস্ট ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : দীর্ঘদিন সেচ কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর অবশেষে এক দশক পর চালু হলো দেশের প্রথম সেচ প্রকল্প নীলফামারীর বুড়ি তিস্তা। টানা খরায় হাত গুটে বসে ছিল ওই এলাকার প্রান্তিক কৃষক। বৃষ্টির পানির অভাবে যখন কৃষকেরা জমিতে হাল চাষ দিতে পারছিলোনা তখনই আশির্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানি। ক্যানেল ভরা পানিতে যেন কৃষকের হৃদয় ভিজেছে। খরায় পোড়া জমিগুলো হয়েছে সতেজ। শুরু হয়েছে আমন চারা লাগানোর ধুম। সব ঠিক থাকলে চলতি আমন মৌসুমে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা মূল্যের ১৬হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করা সম্ভব। গত এক দশক কমান্ড এরিয়ায় সেচ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ৬০হাজার মেট্রিক টন ফসল থেকে বঞ্চিত হয়েছে কৃষকেরা। আনুমানিক যার বাজার মুল্য প্রায় ১৩২ কোটি টাকা।
নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র মতে জানা যায়, কমান্ড এরিয়ার বৃষ্টিনির্ভর আমনের আট হাজার একর জমি অনাবাদি ছিলো মাঠের পর মাঠ। হাতে গোনা কয়েকজন সচ্ছল কৃষক সেচ পাম্পের সাহায্যে সেচ দিয়ে চারা রোপন করতে পারলেও প্রান্তিক কৃষক তাকিয়ে ছিলেন আকাশের দিকে। প্রকল্পে সেচ খাল থাকলেও তাতে ছিলনা পানি। এক যুগ পর সংস্কার করা হয় বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্পের ১১কিলোমিটার দীর্ঘ প্রধান খাল ও ১৯কিলোমিটার দীর্ঘ চারটি শাখা খাল। এসব খালের পানি ৫৭টি আউটলেটের মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে জমিতে সরবরাহ পাওয়ায় পর দুর হয়েছে পানির মহাসংকট। জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার সাত ইউনিয়নের অনাবাদী জমিতে ফসল ফলাতে ষাটের দশকে নির্মাণ করা হয় বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্প। ১৯৬৮ সাল থেকে ২০১০সাল পর্যন্ত সেচ সুবিধা পায় কৃষকেরা। বিগত ২০১০সালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যারেজের উজানে এক হাজার দুইশ’ ১৭ একরের জলাধারাটি মৎস্য চাষের জন্য একটি সংস্থাকে লীজ দেয়ায় বন্ধ হয়ে যায় সেচ কার্যক্রম। এতে কমান্ড এরিয়ায় বন্ধ হয়ে যায় আমন, ইরি বোরো ধান, গম, ভুট্রাসহ শাক-সব্জি চাষাবাদ। এ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতে চলমান থাকা মামলাটি ২০১৮সালে খারিজ হয়ে যায়।
কালিগঞ্জ এলাকার কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, সেচ পাম্প দিয়ে আবাদ করতে গিয়ে লোকসান গুণতে হয়েছে। যাদের আর্থিক অবস্থা একটু ভাল তারা পাম্পের সাহায্যে সেচ দিয়ে আবাদ করেছে। আমরা যারা ছোট কৃষক তাদের পক্ষে পানি কিনে আবাদ করা সম্ভব না। এতে লোকসান হয়।
বঙ্গবন্ধু বাজার এলাকার কৃষক জামিয়ার রহমান বলেন, ব্যারেজের উজানে জলাধার মাছ চাষের জন্য লীজ দেয়ায় আমরা অনেক দিন প্রকল্পের পানিতে আবাদ করতে পারি নাই। তখনকার সময় আমাদের জমি পতিত পড়ে ছিল। আমার যে চার বিঘা জমি আছে অনেক বছর আবাদ করতে না পারায় পরিবার চালাতে খুব কষ্ট হয়েছে। এবার বিনা পয়সায় সেচের পানি পেয়ে আমরা খুব খুশি।
একই এলাকার কৃষক সুশীল চন্দ্র রায় বলেন, এবারে সেচ প্রকল্পের পানিতে আমন ধান চারা রোপন করেছি। রোপা আমন চারা খুব সুন্দর হয়েছে। যেভাবে পরিচর্যা করা হচ্ছে তাতে একর প্রতি কমপক্ষে ৪০মন ধান ফলনের আশা করছি। সারা বছর প্রকল্পটি সচল রাখলে আমরা খুব উপকৃত হবো।
নীলফামারী বুড়ি তিস্তা পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি প্রভাষক শফিক সাদিক বলেন, ভরা বর্ষা মৌসুমে টানা খরায় কমান্ড এরিয়ার জমি গুলো অলস পড়ে থাকায় প্রায় আট হাজার একর জমি আজ প্রকল্পের পানিতে থই থই করছে। আমন চারা রোপন আর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা।
জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারী ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রায় আট হাজার একর জমিতে সেচ দিতে জলঢাকা উপজেলার কালিগঞ্জে বুড়ি তিস্তা নদীর উপর ষাটের দশকে নির্মিত ব্যারেজ ১৯৬৮ সাল থেকে শুরু করে সেচ কার্যক্রম। বিগত ২০১০সাল পর্যন্ত কমান্ড এরিয়ার কৃষকেরা সারা বছরে ভোগ করতো সেচ সুবিধা। মামলা সংক্রান্ত একটি জটিলতায় দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকে সেচ সুবিধা। পরিশেষে ২০১৮সালে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। এবারে রোপা আমন মৌসুমে কমান্ড এরিয়ার জমিতে চলছে সেচ কার্যক্রাম। চলতি আমন মৌসুমে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা মূল্যের ১৬হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হতে পারে। গত এক দশক সেচ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ৬০হাজার মেট্রিক টন ফসল থেকে বঞ্চিত হয়েছে কৃষকেরা। যার বাজার মুল্য প্রায় ১৩২ কোটি টাকা। বরাদ্দ পেলে সেচ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে জলাধার খননসহ সেচ নেটওয়ার্কের সব নালা সংস্কার করা হবে।