নরসিংদীর প্রবীণ সাংবাদিক এম.এ.সালাম রানা দীর্ঘদিন যাবত হৃদরোগে আক্রান্ত, অর্থাভাবে চিকিৎসা ব্যাহত
নরসিংদী প্রতিনিধি, কে.এইচ.নজরুল ইসলাম, ২৪ জুলাই, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : এক সময়ের সাহসী এবং ন্যায় নিষ্ঠাবান সাংবাদিক এম. এ. সালাম রানা আজ বড় অসহায়। নরসিংদীর প্রবীণ সাংবাদিক এম. এ. সালাম রানা ২০১৫ সাল থেকে হৃদরোগে ভোগছেন। কলমযুদ্ধে সফল হলেও জীবনযুদ্ধে হারতে বসেছেন তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার হৃদযন্ত্রে জটিলতাসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে। নরসিংদী জেলাবাসীর সুখ-দুঃখ ও জীবন সংগ্রাম কলমের ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন সাংবাদিক এম. এ. সালাম রানা। সাধারণ মানুষের জন্য জীবনভর কাজ করেছেন।
অসহায় মানুষের হাসি-কান্নার গল্প তুলে আনতে গিয়ে নিজের জীবনের দিকে ফিরে তাকানোর সময়টুকুও পাননি তিনি। অযত্বনে অবহেলায় তার শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ-ব্যাধি। সাংবাদিক এম. এ সালাম রানা ১৯৮১ সালে সাপ্তাহিক অতিক্রম পত্রিকার রিপোর্টার হিসেবে সাংবাদিকতায় পা রাখেন। তিনি বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক, অনলাইন ও রেডিওতে কাজ করেছেন। বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকাসহ দৈনিক গ্রামীণ দর্পণ পত্রিকায়ও তিনি নিয়মিত প্রতিবেদন লিখেন।
সর্বশেষ তিনি দৈনিক বণিক বার্তার নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি থাকাবস্থায় ২০১৫ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তার চিকিৎসায় ইতোমধ্যে লক্ষ-লক্ষ টাকা পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যয় করা হয়েছে। বর্তমানে তার হৃদপিন্ডে একাধিক ব্লক থাকায় বুকে ব্যথা অনুভব করছেন। আস্তে আস্তে ব্যথা হাতে ছড়িয়ে পড়ছে। হাঁটার সময়, সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় বুকে ব্যথা হচ্ছে, থামলে ব্যথা কমে যায়। দম নিতে ও ছাড়তে কষ্ট হয়। বুকে জ্বালাপোড়া ও ধড়ফড় করে।
তিনি ১৯৮২ সালে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সদস্য হয়ে পরবর্তীতে কোষাধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সুস্থ হয়ে আবারো সমাজের সবার মাঝে ফিরে আসতে চান। পুণরায় মানবসেবায় নিজেকে নিযুক্ত করতে মনের দিক থেকে তিনি এখনো প্রস্তুত। তার হার্টের ব্লক দূর করার জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সেই ব্যয়ভার বহন করা এখন অসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তার চিকিৎসা কার্যক্রম বর্তমানে অর্থের অভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করার পরও তার পাশে সহানুভুতি দেখানোর মতো কেউ যেন নেই। তিনি ভাবছেন দুনিয়াতে বেঁচে থাকার দরকার কি। শুধু প্রকৃতির উপর নির্ভর করে তিনি এখন কালাতিপাত করেছেন। সাংবাদিকতা করতে যেয়ে তিনি অনেক প্রশংসিত হয়েছেন, সুনাম অর্জন করেছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে নিন্দাও কুঁড়িয়েছেন। কিন্তু কোন সহৃদয় ব্যক্তি এমন কি নিজের যে সহকর্মী তাদেরও কোন সহানুভুতি পাচ্ছেন না তিনি।
ভেবেছিলেন অনেক কিছু, সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে মনে করেছিলেন দূর্দিনে তার শারীরিক অসহায়ত্বের পাশে দাঁড়িয়ে অনেকে হয়তো সহমর্মিতা দেখাবেন। কিন্তু সে আশা পুরোটাই গুড়ে-বালি। দুনিয়াতে বেঁচে থাকলে মানুষের যে কোন মুহুর্তে বিপদ-আপদসহ নানা রকম সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু অনেকে তা মনে করেন না। তিনি দুঃখ করে কথা প্রসঙ্গে বললেন, সারা দিন-রাত সময় কাটে না বলে অস্থির হয়ে থাকেন সারাক্ষণ। কবে নাগাদ সুুস্থ হবেন এই চিন্তায় তাকে সর্বক্ষণ কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।
কেউ তার পাশে গেলে তিনি তাকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করেন। অর্থাভাবে প্রবীণ সাংবাদিক এম. এ. সালাম রানার চিকিৎসা আজ প্রায় বন্ধ। শুধু কিছু ওষুধ চলছে। এমতাবস্থায় তিনি সকলের নিকট দোয়া চেয়েছেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে ২ কন্যা সন্তানের জনক। তার স্ত্রী ফাহিমা খানম স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন এমডিএস’র নির্বাহী পরিচালক। তিনিও একজন নারী সাংবাদিক হিসেবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কাজ করে নরসিংদীতে অনেক সুনাম কুড়িয়েছেন।
একসময় নরসিংদী প্রেসক্লাবের সদস্যও ছিলেন তিনি। নোংরা রাজনীতির কারণে স্বামী-স্ত্রী দুজনই এখন প্রেসক্লাবের বাইরে। এম. এ. সালাম রানা পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় সারাজীবন শুধু সংসারের ঘানি টেনেই গেছেন। সঞ্চয়ের চিন্তা তেমন করেন নাই। পরিবারের অন্যান্যরা যে যার মতো নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নিয়মিত আয় রোজগার না থাকায় সংসারের চাকাও ভালো ভাবে চলছে না বলে জানা গেছে।