নরসিংদীতে পাইকারী বেগুনের কেজি ৩ টাকা, হতাশায় চাষীরা
নরসিংদী প্রতিনিধি, কে.এইচ.নজরুল ইসলাম, ০৬ এপ্রিল ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : নরসিংদী জেলায় বেগুনের অতিরিক্ত ফলন, এখন বেগুন চাষীদের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে লম্বা বেগুন। চাষীদের মুখে হাসির বদলে, কান্নার কারণ হচ্ছে এই বেগুন। বেগুনের বাজার দরে ধস নামায় চাষীরা এখন দিশেহারা।
নরসিংদীর পাইকারী বাজার গুলোতে এখন প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৩ টাকা দরে। মন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। লাভতো দূরের কথা, বাজারে নেয়ার পরিবহন খরচও তুলতে পাড়ছেনা কৃষকরা। তার উপর ঋনের টাকার উপর চড়া সুদ। এর সুবিদা নিচ্ছে মধ্য স্বত্য ভোগীরা।
কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর অনাবৃষ্টি, বেগুনের বাম্পার ফলন এবং আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি কারণে সবজির উৎপাদন বেড়েছে। ফলে বেগুনের দাম কমে গেছে। তবে শিগগিরই বেগুনের দাম বাড়বে বলে আশাবাদী কৃষি কর্মকর্তারা। বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ গ্রামের চান মিয়া,কালা মিয়া, বদর আলী,সওকত আলী,সাফিজদ্দিন, সাংবাদিকদের জানান, পোড়াদীয়া বাজার সোম ও বৃহস্পতিবার সপ্তাহে ২ দিন বাজার।
গত সোমবার দিন আমরা বেগুন বিক্রি করেছি ২ টাকা থেকে ১.৫০ পয়সা। আমাদের যাতায়াত খরচ ও হয়নি। আমরা বেগুন চাষ করে অনেক রিনে আছি। জেলার মনোহরদী উপজেলা, রায়পুরা, শিবপুর ও পলাশ বেগুন চাষীরা বলেন, বিগত এক মাস ধরে জেলার পাইকারি বাজার বেলাব উপজেলার, সদর বেলাব বাজার, পোড়াদীয়া বাজার, বারিচা, নারায়ণপুর, রায়পুরা উপজেলার রায়পুরা বাজার, মনোহরদী চালাকচর বাজার, হাতিরদীয়া বাজার, শিবপুর উপজেলার সদর বাজার, সিএন্ডবি বাজার, পালপাড়া বাজারসহ সবজির সব পাইকারি বাজারে ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না।
মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি বেগুন ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পারলেও গত এক মাস ধরে বেগুনের দরপতন ঘটেছে। প্রতি কেজি বেগুন ২ থেকে ৩ টাকায় অর্থাৎ মণপ্রতি ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। সার, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচসহ প্রতি কেজি বেগুনের উৎপাদন মূল্য দাঁড়ায় ১০ থেকে ১৫ টাকা। এছাড়া এসব বেগুন বাজারে আনতে পরিবহন খরচও যুক্ত হয়।
এক মাস ধরে বেগুনের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় উৎপাদন খরচ দূরে থাক, পরিবহন খরচও উঠাতে পারছেন না কৃষকরা।বৃহস্পতিবার বেলাব উপজেলার পোড়াদীয়া বাজার সবজির পাইকারী বাজার থেকে পাইকার শেখ ফরিদ, রায়হান, রাফি, হীরন ও মিয়ার উদ্দিন জানান, কেউ ভ্যানগাড়ি, কেউ ইজিবাইক, কেউবা পিকআপ ভ্যানে ভরে বেগুন নিয়ে হাজির হয়েছেন বাজারে।
বেগুনের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও পাইকারি ক্রেতাদের মধ্যে এসব বেগুন কেনায় উৎসাহ ছিল কম। কদর না থাকায় কৃষকরা অনেকটা হতাশ হয়েই পাইকারি ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন। বেলাব উপজেলার পাটুলী ইউনিয়ন দাপনিয়া গ্রামের বেগুন চাষি মোঃমিয়ার উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বেগুন ক্ষেতে নিয়মিত সার, কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়, যা অনেক ব্যয়বহুল। দাম বাড়ার আশায় ১ মাস ধরে নিয়মিত জমির পরিচর্যা করতে গিয়ে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছি।
নরসিংদীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. লতাফত হোসেন বলেন, এ বছর বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। তার উপর আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই লক্ষ মাত্রার চেয়েও বেগুনের ফলন বেশি এসেছে। ফলে বেগুনের দাম কমে গেছে। তবে ঈদের প্রাককালে পুনরায় বেগুনের দাম বেড়ে যাবে।