দেবীদ্বারে স্কুল ছাত্রকে জ্বীনে মেরে গভীর নলকূপের নালায় ফেলে রাখে, এলাকায় তোলপাড়
কুমিল্লা (দেবীদ্বার) প্রতিনিধি, জি.এম মাকছুদুর রহমান, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : দেবীদ্বারে হোসাইন (১৫) নামে নবম শ্রেণীতে পড়ূয়া এক স্কুল ছাত্রকে জ্বীনে মেরে গভীর নলকূপের নালায় ফেলে রাখার সংবাদে এলাকায় তোলপাড় চলছে। ঘটনাটি ঘটে রোবার বিকেল সাড়ে ৫টায় উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বিহার মন্ডল গ্রামের রমজান মিয়ার বাড়ির পাশে গভীর নলকূপের একটি নালায়। নিহত হোসাইন বিহারমন্ডল গ্রামের রমজানের বাড়ির মোঃ চানমিয়ার পুত্র এবং ফুলতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র।
স্থানীয়রা জানান, রোববার বিকেলে বাড়ির পাশে হোসাইন (১৫) ও তার জমজ ভাই ফুলতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীতে পড়ূয়া মোঃ হাসান (১৫) এবং পার্শ্ববর্তী বাড়ির সাগর (১৫), একসাথে নিজেদের আলু ক্ষেতে কাজ করছিল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে কাজ ছেড়ে বাড়িতে কবুতরের খাবার দিতে চলে আসে। এসময় হাসান ও সাগর বাড়িতে আসলেও হোসাইন আর আসেনি। সন্ধ্যার পর হাসান সহ বাড়ির লোকজন হোসাইনকে খুঁজতে বের হয়। বাড়ির প্রায় ৫০গজ দূরে জমির পাশে গভীর নলকূপের নালার কাদায় মাথা গোঁজা অবস্থায় তাকে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
নিহত হোসাইনের ভগ্নীপতি বুড়িচং উপজেলার আবিদপুর গ্রামের হাজী আব্দুল হাকিম’র পুত্র সৌদী প্রবাসী নূর মোহাম্মদ জানান, ওই নির্জন জায়গাটি খুবই খারাপ জায়গা। এর আগেও জ্বীনে ৪/৫ জনকে মেরে ফেলেছে। হোসাইনকে জ্বীনে ঘার মটকে হত্যাপূর্বক গভীর নলকূপের নালার পেক-কাদায় মাথাগুঁজে রেখে যায়। হোসাইন(১৫) এবং মোঃ হাসান (১৫) জমজ ভাই, পাশের বাড়ির সাগর(১৫) সহ তিনজনই জমিতে কাজ সেরে ফেরার পথে হাসান ও সাগর আগে এসে পড়ে।
কিছুদূর আসার পর পেছনে তাকিয়ে দেখে হোসাইন হাত নেড় কি যেন বলছিল। ওরা তার আকুতি গুরুত্ব না দিয়ে চলে আসে। পরে সে ফিরে না আসায় ঘটনাস্থলে যেয়ে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে তারা বুঝতে পারে তাকে জ্বীনে আটকে ফেলেছিল, তার হাত নাড়ায় বুঝাতে চেয়েছিল তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে।
স্থানীয় ও স্বজনেরা তাকে প্রথমে বুড়িচং উপজেলার কংশনগর গোমতী সহ দু’টি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষনা করায় কংশনগর থেকে একই উপজেলার (বুড়িচং) রামচন্দ্রপুরের কাছে কুসুমপুরের হুজুর এর নিকট নিয়ে গেলে তিনি জানান, ৫জন জ্বীন তাকে ঘার মটকে হত্যা করেছে। এর আগেও তাকে জ্বীনে ধরেছিল। ওই হুজুর তাবিজ দিলেও তাবিজ গলায় রাখতে পারেনি। তাই গলায় তাবিজ নাথাকার সুযোগে তাকে ৫জন জ্বীন মিলে মেরে ফেলেছে।
নিহতের পরিবার সোমবার বাদ জোহর হোসাইনের জানাযার আয়োজন করলে, সাংবাদিকরা সোমবার বেলা দেড়টায় স্কুল ছাত্রকে জ্বীনে মেরে ফেলার বিষয়টি নিশ্চিত হতে দেবীদ্বার থানায় খোজঁ নেন। এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার পরিদর্শক তদন্ত সরকার আব্দুল্লাহ-আল-মামুন জানান, এ বিষয়ে কেহ মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ করেনি। তাই বিষয়টি নিশ্চিত হতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
এব্যাপারে বিহার মন্ডল গ্রামের প্রবীন শিক্ষক মোঃ সাহাদাৎ হোসেন ও ইউপি মেম্বার আব্দুল কুদ্দুস জানান, ঘটনাস্থল নির্জন এবং ভয়ঙ্কর, ওখানে দিনের বেলায়ও মানুষ চলাচলে গা ছম ছম করে, এর আগে ওই জায়গায় বহু ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। জ্বীনেই তাকে ঘার মটকে গভীর নলকূপের নালার কাদায় মাথা গুঁজে রেখে গেছে। ওখানে গাছের ডালপালাও ভেঙ্গে তার উপর পড়েছিল। তার পরিবারেরও ধারনা জ্বীনে মেরেছে।
সোমবার বিকেলে সাড়ে ৪টায় ঘটনাস্থল থেকে দেবীদ্বার থানার পরিদর্শক তদন্ত সরকার আব্দুল্লাহ-আল-মামুন সেলফোনে সাংবাদিকদের জানান, যেহেতু বিষয়টি স্পর্শ কাতর সেহেতু নির্ধারিত সময়ে জানাযা বন্ধ রেখে পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানতে পারি, তার সাথে কারোর শত্রুতা ছিলনা, ঘটনার দিন কারোর সাথে ঝগড়া বিবাদ ও হয়নি, পরিবারের লোকজনও কাউকে সন্দেহ করছেননা।
তারা ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফন করতে চায়। তাই এডিএম থেকে অনুমতি আনতে বলি, এডিএম’র অনুমতি না আনতে পারায় সন্ধ্যার পর লাশ থানায় নিয়ে আসি। মঙ্গলবার সকালে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।
স্কুল ছাত্রের মৃত্যুর কারন স্বাভাবিক নাকি জ্বীনে মেরেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি সরকারী পোষাক পড়ে জ্বীনে মেরেছে বলতে পারিনা, প্রাথমিক ধারনায় তার মৃত্যু স্বাভাবিক ভাবেই হয়েছে। সে গভীর নলকূপের নালায় পড়ে গিয়ে মৃত্যু বরন করেছেন বলে ধারনা করছি।
তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই নিশ্চিত মৃত্যুর কারন সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারব। এব্যপারে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে।