ড্রেজার দিয়ে নদীর মাটি কাটায় গৃহহীন এলাকা, বিপাকে ভুক্তভোগীরা
মাদারীপুর প্রতিনিধি, আরিফুর রহমান, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : মাদারীপুরের আড়িয়াল খাঁ নদীর বিভিন্ন শাখা প্রশাখা নদীগুলো থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি প্রভাবশালী মহল। এর কারণে একেরপর এক দেখা যাচ্ছে নদী ভাঙনের দৃশ্য। ফলে গৃহহীন হয়ে পরছে নদীর পাড়ের বাসিন্দারা বাদ পরছেনা নদী ভাঙনের কবল থেকে সরকারি রাস্তাও। এদিকে প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছেনা ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর শহর সংলগ্ন আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে নিয়মিত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আড়িয়াল খাঁ নদী থেকে অবৈধভাবে বালু ব্যবসার একটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন কয়েকজন প্রভাবশালী। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এরা কাউকে তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাচ্ছে এ অবৈধ ব্যবসা।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক এর নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. পারভেজ হোসেন এর নেতৃত্বে মাদারীপুর সদর এলাকার লঞ্চ ঘাট থেকে একটি ড্রেজার আটক করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ ড্রেজারের মালিক পরিতোষ তবে সৈয়দ রাজিবের তত্ত্বাবধানে ড্রেজারটি বালু উত্তোলন করছিল। পুলিশের খবর পেয়ে এ সময় বালু উত্তোলনকারী আরো ৪টি ড্রেজার নিয়ে পালিয়ে যায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে নদীর আসপাশের কিছুই থাকবে না। কালকিনি পৌর মেয়রের ভাই বেলায়েত হাওলাদার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ফাঁসিয়াতলার নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে “হাওলাদার এন্টারপ্রাইজ” নামের ড্রেজার।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কয়েক বছর ধরেই বেলায়েত হাওলাদার নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তলন করছে। যার কারণে নদীর আসপাশে ব্যাপক ভাঙনের দৃশ্য রয়েছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন তারা ক্ষমতাবান, ভয়ে কিছু বলতে পারিনা। প্রশাসন ও তাদের কিছু বলে না।
অনুসন্ধানে আরো দেখা গেছে, রাজৈর উপজেলার শাঁখারপাড়, মল্লিক কান্দি গ্রামের সরকারি পাকা সড়ক আড়িয়াল খাঁ নদীর তীর ঘেঁষে। নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের কারণে সে রাস্তার কয়েক কিলোমিটার নদী গর্ভে চলে গেছে। নদীর তীরেই ছিলো ড্রেজার মেশিন।
ড্রেজার মালিক কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমাদের দোষ কি আমাদের ভাড়া করে আনা হয়েছে। কে ভাড়া করেছে এর উত্তরে বলেন, মাদারীপুর জেলা যুবদলের নেতা মনিরুজ্জামান ফকু সে আমাদের এনেছে। ফকু বলেন, আমরা প্রশাসন ম্যানেজ করেই ব্যবসা করছি।
নদীর পারের বাবুল মুন্সি, শুকুরুন নেসা, রবি সিকদার, সেপাই মল্লিক বলেন, কিছুদিন আগে ড্রেজার মেশিন একটা পুরিয়ে দিয়েছিলো পুলিশ, তারপরেও এখান থেকে বালু উত্তোলন থামছে না। আমাদের রাস্তা গেছে অনেক ঘর ভেঙেছে তবুও এর কোন প্রতিকার নেই। দিনে পুলিশ আসলে পালিয়ে যায় এরপরে রাতে বালু উত্তলন করে। কোনো ভাবেই থামছে না এ নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তলন।
অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, যেহেতু মাদারীপুর জেলায় কোন বালু মহাল নেই কাজেই যেখান থেকেই বালু উত্তোলন করা হোক কেন তাই অবৈধ। আমারা প্রতিনিয়ত এ অবৈধ কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছি। এর আগেও রাজৈর, কালকিনি, শিবচরসহ মাদারীপুরে বালু উত্তোলনকারীদের ধরে জেল জরিমানা করা হয়েছে।