ঝিনাইদহ জেলা জুড়ে এবছরও গমে বস্নাস্ট রোগের আক্রমন, হতাশ কৃষক!
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, মোঃ জাহিদুর রহমান তারিক, ০৬ এপ্রিল ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : ঝিনাইদহের গম ফসলে এ বছরও বস্নাস্ট রোগের আক্রমন দেখা দিয়েছে, সেকারণে ব্যাপক ভাবে হতাশ হয়ে পড়ছেন জেলার কৃষকরা। দিনে গরম আর রাতে শীত, তাপমাত্রার গড়ও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ গড়মিল রয়েছে। যে কারনেই এই রোগের আক্রমন বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
কৃষকরা জানান, দুর থেকে গমের ক্ষেত দেখে মনে হচ্ছে গম পেকে গেছে আর কয়েক দিন পরই কাটা যাবে। কিন্তু বাস্তবে উল্টা, গম গাছ গুলো রোগে শুকিয়ে গেছে। তবে কৃষি বিভাগের দাবি, কৃষকদের গম আবাদে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আর সরকারিভাবে গমের বিজ সরবরাহ ও সংগ্রহ বন্ধ রয়েছে। এরপরও যেসকল কৃষক নিজেদের রাখা বিজে গমের আবাদ করেছেন। সে বিষয়ে গমের বস্নাস্ট নামক ছত্রাক প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে কৃষি বিভাগ।
জানা যায়, ১৯৮৫ সালে বিশ্বের প্রথম বস্নাস্ট রোগের আক্রমন দেখা দেয় ব্রাজিলে। পরবর্তিতে ল্যাটিন আমেরিকার দেশ গুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে কয়েক বছর যেতে না যেতেই সে দেশ গুলোতে প্রয়োজনিয় প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক ব্যবস্থার কারনে আর ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়নি। তবে ২০১৬ সালে ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলার মাঠে গমের আবাদে বস্নাস্ট নামক ছত্রাকের আক্রমন দেখা দেয়। সে সময় মাঠ পর্যায়ে হুমুড় খেয়ে পড়েন কৃষি বিজ্ঞানি ও আন্তর্জাতিক গম গবেষনা বিজ্ঞানিরা। গমে বস্নাস্ট রোগ নির্ণয় করার পর জেলায় হাজার হাজার একর গম আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কৃষকরা নিজ উদ্যেগে জেলার ৬টি উপজেলায় ২৬’শ ৩০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ২’শ হেক্টর, কালিগঞ্জে ১’শ ২০ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৩০ হেক্টর, মহেশপুরে ২’শ ২০ হেক্টর, শৈলকুপা উপজেলায় ১৯’শ ৪০ হেক্টর, হরিনাকুন্ড উপজেলায় ১’শ ৯০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে।
সরেজমিন জেলার মহেশপুর উপজেলার সেজিয়া মাঠে দেখা যায়, মাহাতাপ উদ্দিন, নুর জামাল, বিশারত আলি, রশিদুল ইসলামসহ একাধিক কৃষকের গম ক্ষেত গুলো শুকিয়ে গেছে। এছাড়াও পাশের গম ক্ষেত গুলোতে শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। কথা হয় গম চাষি রশিদুল ইসলামের সাথে তিনি জানান, মাঠে গমের ক্ষেতে সমস্যা হলেও আমাদের মাঠে পূর্বে কোন সমস্যা দেখা যায়নি। এবছরই রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যোচ্ছে।
ভাষানপোতা গ্রামের আক্কাচ আলি জানান, দুর থেকে গমের ক্ষেত দেখলে মনে হচ্ছে পেকে গেছে। কিন্তু কাছে গেলেই দেখা মিলছে রোগের আক্রমনের কারনে গম গাছ গুলো শুকিয়ে নস্ট হয়ে গেছে। এবিষয়ে মহেশপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আবু তালহা বলেন, কৃষকরা নিজেদের রাখা বিজ দিয়ে গমের আবাদ করেছেন। যারা আবাদ করছেন তাদের ফসল সম্পর্কে কৃষি বিভাগ সর্বদা সতর্ক রয়েছে। তাদের প্রতিশেধক দেয়ার জন্য কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিচ্ছেন। উপজেলার কোথাও এবছর বস্নাস্ট রোগের আক্রম দেখা গেছে এমন সংবাদ এখন পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ব্লকের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মেসবাহ আহমেদ জানান, নিজ উদ্যেগে জমিতে কৃষকরা গমের আবাদ করেছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন ছত্রাক নাশক স্প্রে করানো হয়েছে। তবে এ বছর এ ব্লকে বস্নাস্ট রোগের আক্রমন হয়নি। ফলনও বেশ ভাল হবে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ বিএডিসি’র ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক সফিউদ্দিন সবুজ জানান, ঝিনাইদহে গম আবাদে বস্নাস্ট রোগ দেখার পর গত’ক বছর বিজ সংগ্রহ বন্ধ ও বিতরন করেছে না বিএডিসি। একই সাথে কৃষি বিভাগ কৃষকদের গম আবাদে নিরুৎসাহিত করছেন। এরই মধ্যে বস্নাস্টরোগের আক্রমন থেকে রেহাই পেতে বস্নাস্ট প্রতিরোধী জাত উদ্বোধন করা হয়েছে। যা বারি গম-৩৩ নামের একটি বীজ জাতীয় বীজ বোর্ড এ মৌসুমে অনুমোদন দিয়েছে। খামার ও কৃষি খামারে প্রদর্শনের মাধ্যমে আবাদ হচ্ছে। আগামি বছর থেকে এই বীজ কৃষকদের মাধ্যে বিতরন করা যেতে পারে বলে তিনি জানান।
ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগের উপপরিচালক জিএম আব্দুর রউফ জানান, কৃষকদের গম আবাদে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এরপরও যে সকল কৃষক নিজেদের রাখা বিজে গমের আবাদ করেছেন। সে বিষয়ে গমের বস্নাস্ট নামক ছত্রাক প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে কৃষি বিভাগ। তবে গমে বস্নাস্ট রোগের আক্রমনের কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি।