জামায়াতের নতুন আমির মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধের ‘প্রমাণ মিলেছে’
ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : আজ সোমবার ধানমন্ডিতে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে মৌলভীবাজারের তিন জনের বিরু্দ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের কিছু তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।
হান্নান খান বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মকবুল আহমেদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে তদন্ত সংস্থা। তদন্তে অগ্রগতিও হয়েছে। কিছু তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষ আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করার বিষয়টি জানানো হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মকবুলের আগে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আরও দুই নেতা আবদুস সুবহান ও এ টি এম আজহারুল ইসলামেরও ফাঁসির রায় হয়েছে ট্রাইব্যুনালে। আরেক নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় সবাই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তারের পর মকবুল আহমাদকে ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব দেয় জামায়াত। আর গত ১৭ অক্টোবর তাকে আমির নির্বাচনের কথা গণমাধ্যমকে জানায় তারা।
জামায়াতের এর আগের সব নেতাই ছিলেন চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী। তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতার তথ্য প্রমাণ ছিল আগে থেকেই। কিন্তু মকবুলের বিরুদ্ধে এমন জোরালো কোনো অভিযোগ আসেনি গণমাধ্যমে।
মকবুলকে জামায়াত আমির হিসেবে বেঝে নেয়ার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইুব্যনালের তদন্ত সংস্থা জানায়, এই নেতার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি তার কাছে।
তবে মকবুল জামায়াতের আমির হওয়ার পর তার নিজ এলাকা ফেনীর মুক্তিযোদ্ধারা তার একাত্তরের ভূমিকা সামনে নিয়ে আসেন। তারা জানান, জামায়াতের সেই সময়ের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা হিসেবে অন্যান্য অনেকের মতো মকবুলও পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ করেন তারা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসব প্রতিবেদক প্রকাশের পর অনুসন্ধানে নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বলেন, ‘একটি অনলাইন পত্রিকার খবরের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। তার বিরুদ্ধে সাত থেকে ১১ জনকে হত্যার অভিযোগ পেয়েছি। এই অভিযোগ প্রমাণ হলে মামলা করা হবে।’
মৌলভীবাজারের তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৌলভীবাজারের বড়লেখার তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে করা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন চুড়ান্ত করেছে তদন্ত সংস্থা। আসামি হলেন- আব্দুল মান্নান ওরফে মনাই মিয়া, আব্দুল আজিজ ওরফে হাবু ও আব্দুল মতিন। এদের মধ্যে আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মান্নান গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
এই তিন জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে প্রতিবেদনে। তদন্ত সংস্থার সদস্য শাহজাহান কবির মামলাটির তদন্ত করছেন।
এদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ হচ্ছে-
১. ১৯৭১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে ঘোলসা গ্রাম থেকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)এর নেতা হরেন্দ্রলাল দাস ওরফে হরিদাস, মতিলালদাস, নগেন্দ্র কুমার দাস এবং শ্রীনিবাস দাসকে অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পে নির্যাতন করা হয়। ২২ মে জুরী বাজারের বধ্যভুমিতে কয়েকজনের লাশ পাওয়া যায়।
২. অক্টোবরের শেষ দিকে বিওসী কেছরীগুল গ্রামের সাফিয়া খাতুন ও আব্দুল খালেককে অপহরণ করে নির্যাতন।
৩. পাখিয়ালা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মঈন কমান্ডারের বাড়িতে হামলা করে মালামাল লুট এবং অনেককে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন।
৪. হিনাইনগর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা স্তকিন কমান্ডারের বাড়িতে হামলা করে। তাকে না পেয়ে তার ভাই মতছিন আলীকে অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পে নির্যাতন।
৫. ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর ডিমাই বাজার হতে মুক্তিযোদ্ধা মনির আলী ও তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে কেরামতনগর টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মানবতাবরোধী অপরাধের মামলায় বড়লেখার তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সৌজন্যে ঢাকাটাইমস