জাতীয় সংসদ নির্বাচন
নির্বাচন, ০৪ অক্টোবর, ২০১৭, (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪): জাতীয় সংসদ নির্বাচন-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচন সংক্রান্ত সকল তথ্য ও নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়। জাতীয় সংসদগণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সভা ও এটি এক কক্ষ বিশিষ্ঠ। এ আইন সভার জন্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ৩০০ জন সংসদ সদস্যকে নির্বাচিত করা হয়। এছাড়াও ৫০ জন মহিলা সংসদ সদস্য সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যরূপে মনোনীত হন। নির্বাচিত রাজনৈতিক দলের প্রধানমন্ত্রীই হলেন সরকার প্রধান। রাষ্ট্রের প্রধান হলেন একজন রাষ্ট্রপতি যিনি জাতীয় সংসদ কর্তৃক নির্বাচিত হন। বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির পদ হলো আনুষ্ঠানিকতা, প্রকৃতপক্ষে সকল ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে সরকার প্রধানের হাতে।
১৯৯১ সালের পর থেকে বাংলাদেশে দুই রাজনৈতিক দল কেন্দ্রিক নির্বাচন শুরু হয়েছে অর্থাৎ দুটি রাজনৈতিক দলই দেশের সকল প্রকার নির্বাচনের মূলে থাকে এবং বকী দলগুলোর জন্য এককভাবে নির্বাচন করে সরকার গঠন করা অনেক কঠিন।
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন[সম্পাদনা]
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩, বাংলাদেশে ৭ই মার্চ ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে এবং ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন লাভ করে যেখানে এগারো জাতীয় সংসদ সদস্য অবাধে ভোটবিহীনভাবে জয় লাভ করে।[১] মোট ভোট সংগৃহীত হয়েছিল ৫৪.৯%।
দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন[সম্পাদনা]
দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৯, বাংলাদেশে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জয় লাভ করে; তারা জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২০৭টি আসন লাভ করে। মোট ভোট সংগৃহীত হয়েছিল ৫১.৩%। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (মালেক) ৩৯, আওয়ামী লীগ (মিজান) ২, জাসদ ৮, মুসলিম লীগ ও ডেমোক্রেটিক লীগ ২০, ন্যাপ (মোজাফ্ফর) ১, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ২, বাংলাদেশ গণফ্রন্ট ২, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল ১, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন ১, জাতীয় একতা পার্টি ১ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৬টি আসনে জিতেন।[১]
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন[সম্পাদনা]
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৮৬, বাংলাদেশে ৭ই মে ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মোট ১,৫২৭ জন প্রার্থী অংশগ্রহন করে।[২] নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসন নিয়ে জয় লাভ করে। মোট ভোটারের ৬১.১% ভোট সংগৃহীত হয়েছিল।[৩] পূর্বের নির্বাচনের বিজয়ী বিএনপি এই নির্বাচনটি বর্জন করেছিল।
চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন[সম্পাদনা]
চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৮৮ বাংলাদেশে ৩রা মার্চ ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনটি বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রধান দলই বর্জন করেছিল; যেমন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ, জাতীয় আওয়ামী পার্টি (মুজাফ্ফর) এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।[৩] নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জয় লাভ করে, তারা ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৫১টি আসন লাভ করে। মোট ভোটারদের মধ্যে ৫২.৫% ভোট গৃহীত হয়েছিল।
পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন[সম্পাদনা]
পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৯১, বাংলাদেশে ২৭শে ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্বাচনে দুটি প্রধান দল, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিল শেখ হাসিনা; বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বে ছিল খালেদা জিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের বিপরীতে ৪২৪জন সতন্ত্র প্রার্থীসহ ৭৫টি দল থেকে মোট ২৭৮৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি জয় লাভ করে। তারা ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৪০টি আসন লাভ করে। মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল ৫৫.৪%।[৪]
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন[সম্পাদনা]
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৯৬, ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করেছিল। মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল মাত্র ২১%।[৫] বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনে জয় লাভ করে এবং ৩০০টি আসনের মধ্যে ৩০০টি আসনই লাভ করে।[৪] পরবর্তীতে নিরপেক্ষ নির্বাচন জুনে অনুষ্ঠিত হয়।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন[সম্পাদনা]
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন জুন, ১৯৯৬, জুন ১২, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়।[৬] নির্বাচনে দুটি প্রধান দল, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিল শেখ হাসিনা; বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি) নেতৃত্বে ছিল খালেদা জিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের বিপরীতে ২৮১জন সতন্ত্র প্রার্থীসহ ৮১টি দল থেকে মোট ২৫৭৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয়লাভ করে। উক্ত নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থীরা ০.৬৭% এবং দলীয় প্রার্থীরা ৭৪.৮২% ভোট লাভ করে।[৫]
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন[সম্পাদনা]
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০১, আক্টোবর ১, ২০০১ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুটি প্রধান দল, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিল শেখ হাসিনা; বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি) নেতৃত্বে ছিল খালেদা জিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের বিপরীতে ৪৮৪জন সতন্ত্র প্রার্থীসহ ৫৪টি দল থেকে মোট ১৯৩৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। এটি হলো ১৯৯৬ সালে চালু হওয়া তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বিতীয় নির্বাচন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন লতিফুর রহমান।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন[সম্পাদনা]
বাংলাদেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৯শে ডিসেম্বর ২০০৮ সালে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্ঠা ফখরুদ্দীন আহমদ-এর নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকারের অধীনে। সামরিক সরকার ২০০৭ সালের শুরুর দিকে জরুড়ি অবস্থা জাড়ি করে যা ২০০৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর তুলে নেওয়া হয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সরকারি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য রয়েছে কিন্তু অনেক বেশি তথ্যের জন্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও অন্য উৎসগুলোই শ্রেষ। যেমন, নিউ এইজ নির্বাচন পোর্টাল (newagebd.com/election)।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন[সম্পাদনা]
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৪ বাংলাদেশে ৫ই জানুয়ারি ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটি নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও সতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এছাড়াও নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় নির্বাচনটি নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।