চৌদ্দগ্রাম মুক্তিযোদ্ধাকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনা
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, আবদুল মান্নান, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম বাতিসা এলাকায় এক মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই মুক্তিযোদ্ধার নাম আবদুল হাই কানু। গত শনিবার তিনি নিজ এলাকা লুধিয়ারায় ফিরে আসেন। এরপর গতকাল রোববার স্থানীয় কয়েক জন তাকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনা করে। এরপর এলাকা থেকে বের করে দেয়।
স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনার ঘটনাটি রোববার দুপুরে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ঘটেছে। এ ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন মিলে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে জুতার মালা পরিয়ে এলাকা ছেড়ে যেতে বলছে। এ সময় গ্রামবাসীর কাছে তাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্যও বলতে শোনা যায়। জুতার মালা পরানো ও এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সদস্য ছিলেন। স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার প্রথমদিকে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্কের কারণে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন। স্থানীয় এক জামায়াত নেতাকে এলাকা ছাড়া করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু পরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে এলাকায় থাকতে পারেননি কানু। এমনকি হত্যা মামলায় আসামিও হয়েছেন তিনি।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘রাতে ফেসবুকে আমি এ ধরনের একটি ভিডিও ক্লিপ দেখেছি। এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানাচ্ছেন অনেকেই।
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তারু উজ জামান বলেন, ঘটনার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা কানু মোবাইল ফোনে বিষয়টি আমাকে অবগত করেছিলেন। এ বিষয়ে তিনি অভিযোগ করবেন না বলেও জানান। তবে রাতে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ায় তাকে আবারও অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তিনি অভিযোগ দেবেন কিনা বিষয়টি এখনো নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করে নাই, কিন্তু আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামীকে গ্রেফতার করার জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এই নেক্কারজনক কাজটি যে করছে তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির আইনের আওতায় আনার জন্য অনুরোধ করেছি।
ঘটনার বিষয়ে রাতে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমীর মো. মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এই ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহীনিকে অনুরোধ করছি, মুক্তিযোদ্ধা কানুকে যারা হেনস্থা করেছে তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার জন্য।