চৌদ্দগ্রাম বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, আবদুল মান্নান, ২৯ মে ২০২৫ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : চৌদ্দগ্রাম বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ করে দুর্বত্তরা। বুধবার উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীপুর কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম এক বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা ভাঙচুরের পর অগ্নি সংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে একতলা ভবনের চারটি কক্ষের আসবাবসহ মালামাল পুড়ে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আলী হোসেন গুণবতী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তাঁর স্ত্রী রাশেদা আখতার কুমিল্লা জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। রাশেদার ছোট ভাই মুজিবুর রহমান মঞ্জু এবি পার্টির চেয়ারম্যান।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলী হোসেন দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে কুমিল্লা শহরে বসবাস করেন। জামশেদ আলম নামের এক ব্যক্তি বাড়িটির দেখভাল করেন। জামশেদ তাঁর তিন শিশুসন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার পর দুর্বৃত্তরা বাড়িটির দরজা-জানালায় ভাঙচুর চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে তাঁরা বসতঘরের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। পরে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় জামশেদ ও তাঁর স্ত্রী-সন্তান এবং আশপাশের বাড়ির মানুষের চিৎকারে গ্রামের লোকজন ছুটে এসে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভান।

বাড়ির তত্ত¡বাবধায়ক জামশেদ আলম বলেন, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। কোনো রকমে বাচ্চাগুলোর প্রাণ রক্ষা করেছেন। তাঁদের চিৎকারে আশপাশের মানুষ এসে আগুন নেভান। বুধবার সন্ধ্যায় রাশেদা আখতার সাংবাদিকদের বলেন মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে একদল দুর্বত্ত তাঁদের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করে। পরে পেট্রল বা দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ঘরে থাকা সবকিছু পুড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের হুমকির মুখে আমার স্বামী গ্রামের বাড়িতে যেতেন না। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। আগেও দুষ্কৃতকারীরা একবার বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করেছিল। মঙ্গলবার রাতে আবার হামলা করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। কারা হামলা চালিয়েছে, সেটা এখনই নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। তবে হামলাকারীদের সংখ্যা ছিল ১০ থেকে ১২ জন। তাঁরা মুখে মাস্ক ও মাথায় হেলমেট পরা ছিল।’

রাশেদা আখতারের ভাষ্য, তাঁর স্বামী আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। তিনি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। মুজিবুল হক (চৌদ্দগ্রামের সাবেক সাংসদ) তাঁকে রাজনৈতিক ভাবে চৌদ্দগ্রামে দাঁড়াতে দেননি। তাঁর স্বামীর ৫৪ বছরের সংগ্রাম আর সততার ফল এভাবে পাবেন ভাবতেও পারেননি। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে তিনি এ ঘটনার বিচার চান।

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, হামলা ও আগুন দেওয়ার খবর পেয়ে বুধবার সকালে ঘটনা স্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে কারা হামলা চালিয়েছে, সেটা এখনো জানা যায়নি। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখনো কেউ থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে তাঁরা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *