চৌদ্দগ্রাম বালিশ চাপা দিয়ে স্ত্রীকে হত্যা, ঘাতক স্বামী গ্রেফতার

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, আবদুল মান্নান, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম বৃদ্ধা শাহিদা বেগম হত্যার আড়াই মাস পর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে স্বামী স্থানীয় মসজিদের ইমাম আবদুল মমিন নিজেই জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ।

পুলিশ জানায়, ঘোলপাশা ইউনিয়নের ধনুসাড়া গ্রামে গত ৩ ফেরুয়ারি (সোমবার) সকালে শাহিদা বেগমের লাশ বাড়ির টয়লেটের সেপটি রিংয়ের মধ্যে বিবস্ত্র অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তার ছেলে মাছুম বিল্লাহ বাদি হয়ে এবং স্বামী আবদুল মমিন ১নং স্বাক্ষী হয়ে ওইদিন অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেছিল। মামলার পর পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোঃ নাজির আহম্মেদ খানের নির্দেশনায় এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হেশাম উদ্দিন গত ২৭ মার্চ ১ নম্বর সাক্ষী আব্দুল মমিনকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আদালতে পাঠিয়ে মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ২ দিনের মঞ্জুর করেন।

গত ২১ এপ্রিল পুলিশ আবদুল মমিনকে নিজেদের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চৌদ্দগ্রাম থানায় নিয়ে আসে। আবদুল মমিনকে নিবিড় ভাবে এবং দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করার একপর্যায়ে শাহিদা বেগমকে খুন করার কথা স্বীকার করে এবং বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিতে ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করে। আবদুল মমিনের বরাতে পুলিশ উল্লেখ করে, আবদুল মমিনের মা বর্তমানে জীবিত আছেন এবং বয়স ১৩০ এর কাছাকাছি। তার মা তেমন চলাফেরা করতে না পারলেও শারীরিক ভাবে সুস্থ রয়েছেন। মায়ের সেবা যত্ম নিয়ে স্ত্রীর সাথে প্রায় সময় ঝগড়া হতো। আবদুল মমিন ও তার ভাই এক মাস করে পালাক্রমে মায়ের দায়িত্ব নিয়ে সেবা যত্ন করছেন। মমিনের ছেলে মাছুম তাদের পুরাতন বাড়িতে দাদী এবং পরিবার নিয়ে থাকছে।

অপর দিকে মমিন ও তার স্ত্রী শাহিদা বেগম ধনুসাড়া পূর্ব পাড়ায় তাদের নতুন বাড়িতে থাকতেন। তিনি স্থানীয় মসজিদে ইমামতিও করতেন। ঘটনার আগের দিন মমিন তার মায়ের খোঁজ খবর নিতে পুরাতন বাড়িতে গেলে তার মা নালিশ করে যে, তার স্ত্রী তার (মায়ের) সাথে দুর্ব্যবহার করেছে। তখন মমিন মনে মনে রাগান্বিত হয়েছিল। ওই রাতে মমিন তার স্ত্রী ভিকটিম শাহিদা বেগমকে মায়ের সাথে খারাপ আচরণের কথা জিজ্ঞেস করলে শাহিদা বেগম ক্ষিপ্ত হয়ে গালমন্দ শুরু করে। মমিন বিরক্ত হয়ে তার পাশে থাকা বালিশ দিয়ে তার স্ত্রী শাহিদা বেগমের নাক ও মুখে চাপ দিয়ে ধরে রাখে। কিছুক্ষণ পর দেখে তার স্ত্রী আর নড়াচড়া করছে না।

এক পর্যায়ে বুঝতে পারেন যে তার স্ত্রী আর বেঁচে নেই। পরে ভোর ৪টার পর স্ত্রীর লাশ কাঁধে করে বাড়ির উত্তর পাশে টয়লেটের সেপ্টি রিংয়ের ভেতরে রেখে ওপরের ঢাকনাটি আবার লাগিয়ে দেন। লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় শাহিদা বেগমের পরনের পেটিকোটটি তার শরীর থেকে পড়ে যায়। লাশ টয়লেটে রেখে বাড়ির নলকুপ থেকে গোসল করে পেটিকোটটি বালতির মধ্যে রেখে ভোর ৫টার দিকে আবদুল মমিন মসজিদে নামাজ পড়াতে চলে যায়। মসজিদ থেকে এসে তার ছেলেকে ফোন দিয়ে বলে, তোমার মাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে তার ছেলেসহ আশেপাশের লোকজন মমিনের নতুন বাড়িতে এসে অনেক খোঁজাখুজির পর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে লাশ খুঁজে পায়। লাশ খোঁজার সময় আবদুল মমিন সবার সাথে থাকলেও কেউ তাকে সন্দেহ করেনি। বর্তমানে ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *