চৌদ্দগ্রাম বন্ধুর প্রেমে সহায়তার অভিযোগে স্কুলশিক্ষার্থীকে পিটুনি, পরে মৃত্যু
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, আবদুল মান্নান, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় সহপাঠী বন্ধুর প্রেমে সহযোগিতা করার অভিযোগে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক কিশোরকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ঘটনার এক দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোঃ আতিক হোসেন (১৭) নামের ওই কিশোর মারা যায়। চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সোনাকাটিয়া আদর্শ গ্রামে গত সোমবার রাতে ওই কিশোরকে পিটুনি দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যুর খবর এলাকায় জানাজানি হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন এলাকাবাসী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। নিহত আতিক সোনাকাটিয়া আদর্শ গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। স্থানীয় চৌদ্দগ্রাম সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার তার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নিহত আতিকের সহপাঠী স্থানীয় সোনাকাটিয়ার এক কিশোরের সঙ্গে এলাকার সৌদিপ্রবাসী এক ব্যক্তির মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর জেরে গত বছরের ১৩ অক্টোবর তারা পালিয়ে বিয়ে করে। এরপর ওই কিশোরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগে মামলা করে মেয়েটির পরিবার। তবে মামলায় আতিককে আসামি করা হয়নি। এর কয়েক দিন পর পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে আদালতের মাধ্যমে পরিবারের জিম্মায় দেয়। এ ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছিল। আতিককে আসামি না করলেও ঘটনার শুরু থেকেই মেয়েটির পরিবারের সন্দেহ ছিল, মেয়েকে পালাতে সহায়তা করেছে সে।
এ ঘটনার জেরে গতকাল সোমবার রাতে মেয়েটির বাবার নেতৃত্বে পাঁচ থেকে ছয়জন আতিককে সোনাকাটিয়া এলাকায় পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার চিকিৎসক দ্রুত তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) নিতে বলেন। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা না পেয়ে স্বজনেরা আতিককে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেলে তার মৃত্যু হয়।
আতিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করে মেয়েটির বাড়িতে হামলার চেষ্টা চালান। খবর পেয়ে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আতিকের বাবা আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের গ্রামের একটি প্রেমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেয়েটির বাবার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে অন্যায় ভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমার ছেলের এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। আমার ছেলে তো তার মেয়ের সঙ্গে প্রেম করেনি। তার মেয়ে যে ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে, সেই ছেলের বন্ধু হওয়ায় আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমি খুনিদের বিচার চাই। ঘটনার পর এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে মেয়েটির পরিবার। এ বিষয়ে কথা বলতে মেয়েটির বাবার মুঠোফোনে কল করলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। মেয়েটির মায়ের মুঠোফোন নম্বরে কল করলে তিনি ধরার পর প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আতিকের বাবা বাদী হয়ে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামীদের গ্রেফতার করার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বুধবার সকালে চৌদ্দগ্রাম ট্যাকনিকাল কলেজের ছাত্ররা আতিক হত্যাকারিদের বিচার চেয়ে চৌদ্দগ্রাম বাজারে একটি বিক্ষোপ মিছিল ও মানববন্ধন করেন।