গাজীপুরে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ: স্বামী বলছে বিয়েই হয়নি
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি, মোঃ ইসমাইল খন্দকার, ২২ অক্টোবর, ২০১৯ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : গাজীপুরে যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও ছলনাকরে একাধিক বিয়ে করার অভিযোগে ২ জনকে অভিযুক্ত করে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন পোশাক শ্রমিক মোছা: শিমা। অভিযুক্তরা হলেন, তার স্বামী সদর থানার ভবানীপুর এলাকার ফরিদ মার্কেট সংলগ্ন মৃত নুর মোহাম্মদ কাজীর ছেলে ১। আক্তার কাজী ও তার স্বামীর বন্ধু একই এলাকার কাশেম মোল্লার ছেলে কাইয়ূম মোল্লা।
শিমার সাথে কথা বলে ও অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, শিমা আক্তার বয়স ২৩ শ্রীপুর পৌরসভা লোহাগাছ গ্রামের হতদরিদ্র পিতা মো: হারুনের মেয়ে। জীবিকার তাগিদে বর্তমানে গাজীপুর সদর থানার ভবনীপুর এলাকায় বাড়া বাড়িতে থেকে পোশাক কারখানায় চাকুরী করেন।
সংসারে অভাব অনটনের জন্য বেশিদুর লেখাপড়াও করতে পারেনি। বাবার কষ্ট আর সংসারের টানাপোড়ন মোচনে পরিবারের সবার মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দেওয়ার লক্ষে বেরিয়ে পরেন জীবন সংগ্রামে। কাজ নেন পোশাক কারখানায়। চাকুরী করায় দিন দিন দুর হচ্ছিল সংসারের অভাব অনটন। সংসারের গানি টানার কিছুটা লাঘব হয়েছিল বৃদ্ধ বাবার। এভাবেই ভালো ভাবে দিন কাটছিলো শিমার।
এরপর ৪ বছর পূর্বে ২০১৫ সালে ইসলামিক শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে হয় ছেলে আক্তার কাজীর সঙ্গে। বেশ কিছুদিন ভালো ভাবেই চলছিলো, কিন্তু সুখ আর বেশি দিন সইলনা শিমার কপালে। বিয়ের পর শিমার বেতনের টাকা তার স্বামী কৌশলে ভবিষ্যতের কথা বলে তার কাছ থেকে নিয়ে যেতো।
এর কিছুদিন পরে বেতনের টাকা শিমা নিজে সঞ্চয় করবে জানালে, আক্তার তাকে ভুল বুজিয়ে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করে এতে রাজী না হওয়ায় আক্তার তাকে মানষিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। বাধ্য হয়েই সব টাকা আক্তারের কাছে দিয়ে দিতে হতো না দিলে তাকে মারধর, অত্যাচার করা হতো। তার বাবাকে কোন টাকা দিতে দেওয়া হতোনা। মাঝে মাঝে লুকিয়ে গোপনে কিছু টাকা তার বাবাকে দিতো শিমা।
এরই মধ্যে ব্যবসার কথা বলে বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য আমাকে খুবই নির্যাতন করতে থাকে আমি না পেরে সুধে (লাভে) ৫০ হাজার টাকা এনে দেই। এতেও তিনি ক্ষান্ত হননি এর কিছুদিন পরে আবার ২ লক্ষ টকা এনে দিতে বলে আমি অস্বীকার করলে আমাকে মারধর গালিগালাজ করে হুমকি দেয়, টাকা এনে না দিলে মোটা অঙ্কের টাকা যৌতুক নিয়ে আরও বিয়ে করবে। এর কিছুদিন পরে জানতে পারি সে আরও তিনটি বিয়ে করেছে।
অনেক মেয়েদের সাথে অবৈধ সম্পর্কও রয়েছে। এখন শুধু আমার কাছে টাকা চায়। আমার কোন খুজ খবর রাখেনা। আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়না। টাকার জন্য আমাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। খুন জখমের হুমকি দেয়। আর তার এই সব কাজে তার বন্ধু কাইয়ুম তাকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ১৪ অক্টোবর আক্তার ও কাইয়ুম আমাকে আবারও মারধর করতে চায়। আমি কোন রকমে পালিয়ে যেতে সক্ষম হই। আমি তার মত নারীলোভী, যৌতুকলোভী, চরিত্রহীন, লম্পট, ভন্ড প্রতারকের উপযুক্ত শাস্তি চাই।
এদিকে তার দাবীকৃত স্বামী অভিযুক্ত আক্তার কাজী মুঠোফোনে জানান, তার সাথে আমার বিয়ে হয়নি। শিমা আগে উশৃংখলভাবে চলাফেরা করতো আমি তাকে খারাপ পথ থেকে ফিরিয়ে এনেছি। আমি তার অনেক উপকার করেছি। তার পিছনে অনেক টাকা পয়সা নষ্ট করেছি। এতকিছু কেন করেছেন, প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে, তিনি বলেন এবিষয়ে শিমার সাথে আমার কিছুক্ষন আগে কথা হয়েছে। আমরা সামাজিকভাবে বিষয়টা মিমাংসা করার জন্য বসবো।
এর কিছুক্ষণ পর শিমা মুঠোফোনে জানান, কাজীর মাধ্যমে আমাদের বিয়ে হয়েছে। কাজী আমার কাছ থেকে খাতায় সাক্ষর ও নিয়েছে। কাজীর কাছে কাবিনের কাগজ চাইলে কাজী আমাকে বলে আপনাদের নিজেদের বিষয় বাড়িতে বসে মিমাংসা হয়ে যান।
আমি চাই তারমত একজন ভন্ড প্রতারকের মুখোশ সমাজের সবার সামনে উন্মোচিত হোক, যাতে আমার মত আর কোন মেয়ের সাথে এমন কাজ না করতে পারে। সবাই যেন তার কাছ থেকে সচেতন থাকে।
এ বিষয়ে দায়িত্বরত তদন্ত অফিসার শ্রীপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) রফিকুল ইসলাম বলেন, তদন্ত চলছে, তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।