গাইবান্ধায় বন্যার পানি নিম্নমুখী, বাড়ছে দুর্ভোগ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি, একরামুল হক, ০১ জুলাই, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : টানা বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে সৃষ্টি বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে । গত ২৪ ঘণ্টায়  ৪ সেন্টিমিটার পানি হ্রাস পেয়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি এখনো  বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ও ঘাঘট নদীর পানিগত ২৪ ঘণ্টায়  ৪ সেন্টিমিটার পানি হ্রাস পেয়ে গাইবান্ধা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে তিস্তা, যমুনা, কাটাখালি ও করোতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ফলে এখনো পানিতে তলিয়ে আছে বাড়িঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পানি কমতে থাকলেও কমেনি দুর্ভোগ। বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া বাড়িঘর ছেড়ে গবাদি পশু নিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে।

গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও ফুলছড়ি উপজেলার  ৫০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মনবেতর জীবন জাপন করছেন। সেইসঙ্গে পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে  প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে ডুবে গেছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা । পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়া শুরু করেছেন। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাচ্ছেন, কেউ বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন আবার কেউ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিচ্ছেন। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যা।

ফুলছড়ি উপজেলার বাউসি গ্রামের  আব্দুল মালেক জানান, ফুলছড়ি সরকারি কলেজ, ফুলছড়ি আলিম মাদরাসা মাঠে হাটু পানি । চলাচলে বেড়ে গেছে দুর্ভোগ। সাঘাটার ভরতখালি ইউনিয়নের কবেজ আলী জানান, পানি বন্দি অবস্থায় আমরা অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছি। রাতে জেগে থাকতে হয় । কখন চোর ডাকাত আসে সেই ভয়ে। ভরতখালি ইউনিয়নের উল্যা গ্রামের আব্দুল মজিদ জানান, প্রতিদিন পানি বৈয়ে বাড়ী থেকে চলাচল করতে পায় ঘা ধরেছে। ফজলুপুর চরের ক্ষতিগ্রস্ত মোবারক হোসেন জানান, এবার এক বিঘা জমিতে পাট ও ৩০ শতক জমিতে সবজি আবাদ করা হয়েছিল। সম্প্রতি নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়া এসব ফসল ডুবে গেছে।

গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান জানান, বন্যার পানি বাড়ার কারণে নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। এখনো যেসব পাট ক্ষেত পানির উপরে রয়েছে সেগুলো কাটার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সরকারি কোন বরাদ্দ পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করা হবে বলেন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা একেএম ইদ্রিস আলী বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী মজুদ আছে এবং বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায়  ৪ সেন্টিমিটার পানি হ্রসি পেয়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি এখনো  বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ও ঘাঘট নদীর পানিগত ২৪ ঘণ্টায় ৪ সেন্টিমিটার পানি হ্রসি পেয়ে গাইবান্ধা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আবদু মতিন জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদী ভাঙন এলাকা ও পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। পানিবন্দিদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে।

গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন  অফিস সুত্রে জানা যায, এ পর্যন্ত জেলায় ৬০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও গাইবান্ধা সদরসহ প্রত্যেক উপজেলায় ২৫ মেট্রিক টন করে চাল এবং ১ লাখ ৭৫ হাজার করে টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *