গাইবান্ধায় এক বছরেও সংস্কার হয়নি বন্যায় বিদ্ধস্ত ব্রীজ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি, একরামুল হক, ০৬ জুন, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ৪টি ও ফুলছড়ি উপজেলার একটি ব্রিজ বন্যায় লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় ১ বছরেও সংস্কার করা হয়নি। ভেঙে যাওয়া সড়কগুলো ঠিক না করায় চলতি মাসে টানা বৃষ্টিতে বেড়ে গেছে জেলাবাসীর দুর্ভোগ।
এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙ্গা সেতুগুলোর স্থানে বাঁশ কিংবা কাঠের সাঁকো তৈরি করে কোনোমতে যাতায়াত করছে। কিন্তু ওই সাঁকোতে ভরসা নেই তাদের। প্রতিদিন হাজারও মানুষের যাতায়াতের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সাঁকোগুলো। দুই উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানালেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ কালভার্টগুলোর তালিকা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম দিকে ভয়াবহ বন্যায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া-রামনগর-গোন্দিগঞ্জ সড়কটির ওপর নির্মিত তিনটি সেতু বন্যায় বিধ্বস্ত হয়ে ভেঙে যায়। ফলে এই তিনটি স্থানে কাঠ বা বাঁশের সাঁকো দেয়া হলেও সাঁকোগুলো দুর্বল। ফলে হেঁটেচলা ছাড়া কোনো যানবাহন চলাচল করে না।
সাঘাটা উপজেলার গুরত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে কাঠের ব্রিজ গত এক বছরের একমাত্র ভরসা। এই ব্রিজের উপর দিয়ে কোনোমতে চলাচল করা গেলেও ভারী যানবাহন চলে না। বন্যায় ভেঙে যাওয়া ব্রিজগুলো বন্যা-পরবর্তী সময়ে মেরামতের আশ্বাস দেয়া হলেও প্রায় এক বছরেও সংস্কার করা হয়নি। ফলে দুর্ভোগের শেষ নেই এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের সবজি বিক্রেতা মশিউর রহমান জানান, জীবিকার তাগিদে মালামাল আনতে বোনারপাড়া শহরে যেতে হয়। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার পথ ঘুরে মালামাল গ্রামে আনতে হয়। এতে খরচ বেড়ে যায়। চরম দুর্ভোগে প্রায় ১ বছরেও মিলছে না প্রতিকার।
বোনারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়ারেছ প্রধান জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচা রাস্তাগুলো সাঘাটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে কাবিটা-কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কার করা হয়েছে। ব্রিজগুলো সংস্কারের জন্য এলজিইউডি বিভাগ এগিয়ে আসলেই এই ইউনিয়নের মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।
অপরদিকে, গত বছর ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বন্যার পানির স্রোতে ফুলছড়ি উপজেলার কেতকিরহাট বাজারে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়। এর ফলে গাইবান্ধা-কঞ্চিপাড়া-কেতকিরহাট পাকা সড়কের কেতকিরহাট বাজারে প্রায় ৫০ ফুট অংশ ভেঙে যায়। পরে ওই সড়কে প্রায় ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬ ফুট প্রস্থের একটি কাঠের সাঁকো তৈরি করে স্থানীয়রা।
কলেজছাত্র সেলিম মিয়া বলেন, সাঁকোটি মেরামত করা না গেলে চরম বিপাকে পড়তে হবে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ, নারী ও অসুস্থ রোগীদের ভোগান্তির শেষ থাকবে না।
ফুলছড়ি উপজেলার এলজিইডির প্রকৌশলী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সাঁকোর স্থলে সেতু নির্মাণে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. ছবিউল ইসলাম জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ কালভার্টের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ২০১৯ সালের বন্যায় জেলার সাতটি উপজেলার ৫১ টি ইউনিয়নের ৩৮৩টি গ্রামের ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৩৫০ জন মানুষ পানিবন্দি হয়। ৫৭৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা এবং ২৩৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।