গঙ্গাঋদ্ধি জাদুঘর” উয়ারি-বটেশ্বর “এর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন
নরসিংদী প্রতিনিধি, কে.এইচ.নজরুল ইসলাম, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন প্রত্নস্থান নরসিংদীর বেলাব উপজেলার উয়ারি-বটেশ্বরে “গঙ্গাঋদ্ধি জাদুঘর” এর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করা হয়েছে। ২৯ নভেম্বর শুক্রবার দুপুরে নরসিংদী-৪ আসনের সাংসদ ও শিল্পমন্ত্রী এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অর্থায়নে ও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণের উদ্যোগে নরসিংদী জেলা পরিষদ জাদুঘরটি বাস্তবায়ন করছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ২ শত ৪৩ টাকা। ৪ বিঘা জমিতে নির্মিতব্য জাদুঘরটির স্থপতি হিসেবে রয়েছেন নিজামুদ্দিন আহমেদ।প্রাচীন প্রত্নস্থান উয়ারি-বটেশ্বরে আবিস্কৃত প্রত্নস্থাপনা, প্রত্নসামগ্রী, আলোকচিত্র, বিবরণ ও বিশ্লেষন প্রদর্শন করা হবে উক্ত জাদুঘরে।
ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, আজকে যে ঐতিহ্য ইতিহাস সেটা বঙ্গবন্ধু নিশ্চয় পড়েছেন, আজকে তিনি নেই। আজকে আমরা সেটাকে পুনরুদ্ধার করেছি আড়াই হাজার বছরের যে স্বাধীনতা। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে উয়ারি বটেশ্বরে পর্যটন নগরী করার। এখানে খননকৃত প্রত্নস্থানগুলোতে ছোট ছোট জাদুঘর নির্মাণ করা হবে।
নরসিংদী জেলা পরিষদ থেকে জানা গেছে, জমি বাছাই হওয়ার পর নকশা তৈরির জন্য পরামর্শক নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০১৫ সালের নভেম্বরে। স্থপতির কাছ থেকে নকশা পাওয়ার পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) পাঠানো হয়। প্রত্যাশা ও বরাদ্দের মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে ওই স্থপতি পাঁচবার নকশা সংশোধন করেন। এটা করতে গিয়ে আড়াই বছর সময় নষ্ট হয়। এ ছাড়া জাদুঘরের জন্য স্থান নির্বাচন নিয়ে দুই গ্রামবাসীর দ্বন্দ্ব ও আদালতে মামলা চলমান থাকায় আরও সময়ক্ষেপণ হয়।
সবকিছুকে পিছনে ফেলে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন উপস্থিত থেকে “গঙ্গাঋদ্ধি জাদুঘর” এর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। ঐতিহ্য অন্বেষণ জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত উয়ারী-বটেশ্বরে ছিল আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন জনপদ। এখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ২০০০ সাল থেকে খননকাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৫০ টি স্থান থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।
বহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত আরাই হাজার বছরের প্রাচীন এই ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরহ্মণ করণে সরকারি খরচে একটি আধুনিক যাদুঘর নির্মাণ করার দাবী করে আসছিল এলাকাবাসী। ১৯৩০ সালে সর্ব প্রথম এলাকার স্কুল শিহ্মক হানিফ পাঠান এই প্রত্নপিঠকে সুধি সমাজের গোচরে আনেন। এখন কাচের পুঁতি চিত্রিত মৃৎপাত্র ব্রোজ নির্মিতি ঘোরা স্বল্প মূল্যবান পাথরের বাটখারা চুন শুরকি নির্মিতি রাস্তা ইট নির্মিতি অন্যান্য স্থাপত্য মন্ত্রপূত কবজ পগগৈতিহাসিক হাতিয়ার মৃৎ মুদ্রাভান্ডার ইত্যাদীসহ আরো পুরাকির্তি আবিস্কার হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদগমণ এগুলো আরাই হাজার বছরের আগের বলে ধারনা করছেন।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ভূঞার সভাপতিত্বে ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নরসিংদী-২ আসনের সাংসদ ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ, নরসিংদী-৩ আসনের সাংসদ জহিরুল হক ভূইয়া মোহন, ঐতিহ্য অন্বেষণের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. নূহ-উল- আলম লেনিন, পর্যটন কর্পোরেশন এর চেয়ারম্যান রাম চন্দ্র দাস, নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, নরসিংদী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী আনোয়ারুল নাসের, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, ঐতিহ্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক ড. সুফী মোস্তাফিজুর রহমান, ট্রাস্টি হাবিবুল্লাহ পাঠান।