ক্যান্সারের ওপর বেশি করে গবেষণার গুরুত্বারোপ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসা বিজ্ঞান বিশেষ করে ক্যান্সারের ওপর আরো গবেষণায় গুরুত্বারোপ করেন, দেশের পরিবেশ এবং জলবায়ুর সাথে ক্যান্সার কিভাবে বিস্তার লাভ করে সেজন্য গবেষণা দরকার। ‘আমাদের দেশে গবেষণার সুযোগ খুবই কম। বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা খুব বেশি একটা হচ্ছেনা। যেটা হওয়া একান্তভাবে প্রয়োজন। ‘ক্যান্সার এমন একটা রোগ এবং যেভাবে এর প্রাদুর্ভাব হচ্ছে তার সেভাবে ডায়াগনোসিস আমাদের দেশে হচ্ছে না। দেশের পরিবেশ এবং জলবায়ুর সাথে এই ক্যান্সার কীভাবে বিস্তার লাভ করে সেটার চিকিৎসার জন্য যে গবেষণা দরকার সেটা আমাদের দেশে খুব কমই হচ্ছে।’ শেখ হাসিনা আজ সকালে ‘কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সাইন্স এন্ড ক্যান্সার রিসার্চ’ নামে নারায়ণগঞ্জে একটি ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার ও হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুমুদিনী কমপ্লেক্স নারায়ণগঞ্জে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে সঙ্গে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর রিসার্চের জন্য অনেকগুলো ইনস্টিটিউট তৈরি কওে গিয়েছিলাম এবং পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে সেগুলোকে আরো উন্নত করার পাশাপাশি আরো নতুন ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। কারন গবেষণা আমাদের জন্য একান্ত অপরিহার্য। কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সাইন্স এন্ড ক্যান্সার রিসার্চ’ শীর্ষক এই সেন্টারটা যখন তৈরি হবে তখন এদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার সুযোগ মানুষ আরো ভালভাবে পাবে। কারণ দেশের সকল মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেশের সকল বিভাগে অন্তত একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে। দেশের সকল বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে রিসার্চের সুযোগ হবে। তবে, আমি মনে করি যে, বেসরকারি খাতকে সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, দানবীর রনদা প্রসাদ সাহার নাতি এবং কুমুদিনী ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা, পরিচালক শ্রীমতি সাহা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট এবং এর প্রতিষ্ঠাতা রনদা প্রসাদ সাহার ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারী অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ মে দানবীর রনদা প্রসাদ এবং তাঁর পুত্র ভবানী প্রসাদকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নারায়ণগঞ্জে তাদের বাসভবন থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তারা আর ফেরেনি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, ’৯৬ সাল থেকেই তাঁর সরকার বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করেছে। শুধু তাই নয় বেসরকারি খাতে হাসপাতাল করতে যেসব যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় বা সরঞ্জমাদির প্রয়োজন হয় সেগুলোকে ট্যাক্স ফ্রি এবং ট্যাক্স কমিয়ে দেয়া হয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠায় যেমন সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, এমনকি শিশুদের জন্য ইনকিউবেটরসহ যা যা প্রয়োজনে সেগুলোও আমি সম্পূর্ণ ট্যাক্স ফ্রি করে দিয়েছিলাম। যে কারণে আমাদের দেশে অনেকগুলো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তবে, এখানে কুমুাদনী ট্রাস্ট সব সময় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে এবং সব চেয়ে বেশি উদ্যোগ তারা নিয়েছে। যখনই যে উদ্যোগ কুমদিনী ট্রাস্ট নিয়েছে তা অত্যন্ত সফলভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেজন্য আমি কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এবং বিশেষ করে শ্রীমতি সাহা এবং রাজিব সাহার প্রতি। কেননা দাদা এবং বাবার কাজগুলো এখনও যে ধরে রেখেছেন এবং করে যাচ্ছেন সেই সাথে তাদের বোন এবং আত্বীয়-স্বজনরাও করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজের অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের দেশের চিকিৎসকরাও গবেষণায় খুব একটা সময় ব্যয় না করে রোগী দেখেই সময় কাটান।
তিনি বলেন, ‘আসলে যাদের গবেষণা করার কথা সেসব চিকিৎসকরা রোগী দেখতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। কাজেই হাতে গোনা খুব কমজনকেই আমি দেখি তাদের পাবলিকেশন্স এবং রিসার্চ।’ যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালেই জাতির পিতা প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ শয্যার একটি করে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসা সেবা জনগণের একদম দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়াই তাঁর লক্ষ্য ছিল। দেশ যখন স্বাধীনতার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুনভাবে এগিয়ে চলা শুরু করেছে তখনই ঘাতকচক্র ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে সেই অগ্রগতির চাকাকে স্তব্ধ করে দেয়। এর মাধ্যমে একটি আদর্শকে হত্যা করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করা হয়। করোনাভাইরাস আসার পরেই ৭ দিনের মধ্যে আমরা ২ হাজার ডাক্তার, ৬ হাজার নার্স এবং টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো নিয়োগের পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য যা যা করা দরকার তাঁর সরকার তা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘আমাদের এই পদক্ষেপের ফলে আজকে করোনাভাইরাস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ সময় প্রথম ভ্যাকসিন গ্রহিতা কুমুদিনী হাসপাতালের সিনিয়র নার্স বেরোনিকা ডি কস্তাকেও তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এক সময় টিকা দেওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও এখন আর কোন সমস্যা নেই, সকলে আগ্রহ নিয়ে টিকা কেন্দ্রে আসছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আমরা বলে দিয়েছি ৪০ বছরের বেশী বয়সী সকলে টিকা পাবে এবং আইডি কার্ড সাথে নিয়ে গেলে তারা ফর্ম পাবেন এবং রেজিস্ট্রৈশনও করতে পারবেন। গতকালও প্রায় এক লাখ ৯৪ হাজার মানুষ টিকা নিয়েছেন এবং আমরা ৩ কোটি টিকা কিনে রেখেছি। একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সকলকেও আমরা টিকা দেব।
তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেয়া সত্বেও সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তাহলে আমি মনে করি আমাদের দেশ থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব পুরোপুরি চলে যাবে। তাই সাবাইকে এটা মেনে চলার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ জনগণ যাতে সেবা পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তাঁর সরকার জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করেছে, সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন ২০১৬ ও সরকার প্রণয়ন করেছে। কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সাইন্স এন্ড ক্যান্সার রিসার্চের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে আমাদের দেশের স্বাস্থ্যখাত আরো একধাপ এগিয়ে গেল এবং বেসরকারি খাত আরো উৎসাহিত হবে এবং সকলেই চাইবে যেন এ ধরনের সেবামূলক কাজ করতে পারে।