কুড়িগ্রামে যুবদলের কমিটিতে মাদকব্যবসায়ী দের আধিক্য
রাজারহাট কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ইব্রাহিম আলম সবুজ, ০৯ মে, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রধান অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটি ২৮ এপ্রিল ২০২১ খৃীঃ এক বিজ্ঞপ্তি তে কুড়িগ্রাম জেলা যুবদলের ৯ টি উপজেলা ও ৩ টি পৌরসভা ইউনিট কমিটির আহবায়ক, সদস্যসচিব এর নাম সহ অনুমোদন দেয়।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কোন নিয়ম নীতি অনুসরন না করেই একই দিন কুড়িগ্রাম জেলা যুবদল প্রতিটি ইউনিটের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কুড়িগ্রাম জেলা যুবদলের সভাপতি রায়হান কবীর ও সাঃসম্পাদক নাদিম আহমেদ স্বাক্ষরিত তারিখ ইস্যু বিহীন ইউনিট কমিটিগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ পেলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিএনপি ও স্থানীয় রাজনৈতিক সচেতন মানুষদের মাঝে সকল কমিটিতে মাদকব্যবসায়ী, মাদক সেবী, শিক্ষাগত যোগ্যতাহীন, ছাত্রদল রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নয়, মাদক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী দের নেতৃত্বে রেখে যুবদলের কমিটি দেয়ায় অস্বস্তি ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতেও প্রচুর সমালোচনামূলক পোষ্ট ও ট্রলের ঝড় উঠেছে।কুড়িগ্রাম জেলা যুবদলের অনুমোদিত কমিটির উলিপুর উপজেলা ও পৌর যুবদল, চিলমারী উপজেলা যুবদল, ফুলবাড়ী উপজেলা যুবদল সহ প্রতিটি কমিটির অনুসন্ধান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে অদ্য ১লা মে শনিবার উলিপুর বিএনপি কার্যালয়ে সমালোচিত অভিযুক্ত কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অনুসন্ধানি তথ্যে দেখা যায়, উলিপুর উপজেলা ও পৌর যুবদলের নতুন আহবায়ক কমিটির ক্রমিক নং-০৫ যুগ্ম আহবায়ক সাঈদুর রহমান টিপু পিতা- ময়েজ উদ্দীন মোবাইল নং- ০১৭৪২৮২৮৫৪৬,একজন চিহৃিত মাদক সেবী ও ব্যাবসায়ী।
এজাহার ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতবছর কুড়িগ্রামের সীমান্ত এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য ফেনসিডিল ও ইয়াবা সঙ্গে করে পরিবহন করতো যা কুড়িগ্রাম ধরলা সেতু পুলিশ চেকপোস্টে নিয়মিত চেকিং এ ছাত্রদল সাবেক সভাপতি সাঈদুল ইসলাম তার ভাই সহ ধৃত হয়। কুড়িগ্রাম সদর থানা কর্তৃক আটক হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মাদক মামলা নং-২৬/ তাং ১৭-১১-২০১৯ইং। মামলাটি এখনও আদালতে বিচারাধীন। উপজেলা যুবদল এর ক্রমিক নং ১৫ সদস্য শ্রী স্বপন কুমার সাহা স্থানীয় মোহিনী ঔষধ ঘর পাখি মজুমদার এর চেক জালিয়াতি মামলায় জেল হাজতে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
উলিপুর পৌর আহবায়ক কমিটির তালিকার ক্রমিক নং ৭-সেকেন্দার আলী পিতা-ইব্রাহীম ওরফে হেরা বেরা কমিটিতে শনাক্ত মোবাইল মোবাইল নং-01776920844 চিহৃিত একজন মাদক ব্যাবসায়ী ও মাদক সেবী। তার নামেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় উলিপুর থানায়। মাদক মামলা-নং-২৪। তাং ১৫-০২-২০১৭ইং। এইমাদক সেবী গ্রুপটি এতটাই বেপরোয়া চলাফেরায় ও মাদক সংশ্লিষ্ট যে তার ইয়াবা সেবনের একটা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ার ইনবক্সে ঘুরে ফিরে আসছে।
নুন্যতম শিক্ষাদীক্ষা নাই নাই কোন ছাত্ররাজনীতির পুর্ব অভিজ্ঞতা এমন যুবকদের আধিক্যতায় যুবদলের কমিটি অনুমোদন হওয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপি যুবদল ও ছাত্রদলের একাধিক নেতা কর্মী।
তাদের অভিযোগ, কমিটিতে যোগ্যদের রাখা হয়নি, যাদের নাম এসেছে তাদের প্রায় সবাই সর্বদলীয় সিন্ডিকেট এর সাথে সংশ্লিষ্ট। কমিটিতে এমন কয়েকজন যোগ্যদের নাম আসলেও তাদের অপেক্ষাকৃত কম মূল্যায়ন করা হয়েছে। অপরদিকে চিলমারী উপজেলা যুবদলে মাদক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী কে যুগ্ম আহবায়ক করে মাদক সংশ্লিষ্টদের স্থান দেয়ার জোড়ালো অভিযোগ উঠেছে। রাজারহাট উপজেলা যুবদলে জায়গা পাওয়া এক নেতা মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে সদ্য ফিরে এসেছেন বলে জানা গেছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা যুবদল আহবায়ক কমিটির প্রথম সুপারিশকৃত আহবায়ক ধরলা সেতু পুলিশ চেক পোষ্টে গাজা ও গাঁজা পরিবহনের পিক আপ সহ আটক হলে তারই অনুগতদের দিয়ে নতুন আহবায়ক কমিটি অনুমোদনের অভিযোগ উঠেছে। উলিপুর উপজেলা যুবদল আহবায়ক কমিটির তালিকা নং(২) যুগ্ম-আহবায়ক শামীম আহমেদ শামীম ও তালিকার (১১)নং সদস্যসচিব মোঃ সামিউল ইসলাম শামীম উভয়ের শিক্ষাগত ব্যাকগ্রাউন্ড নাই এমন কি তারা ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে কখনও সম্পৃক্ত ছিলোনা।
যুবদলের গুরুত্বপুর্ন পদে আসীন হওয়ার মত রাজনৈতিক নুন্যতম ব্যাক গ্রাউন্ড নাই। তাদের ১ম জন আওয়ামী দলীয় হাট বাজার ইজারাদার এর ব্যাক্তিগত ক্যাডার ও উলিপুর গরু হাটের বই লেখক। সদস্য সচিব একজন এলাকার চিহৃিত ব্যাবসায়ী মাত্র। আহবায়ক তৌফিকুর লাভলু তিনি একটি স্কুলে চাকুরী করার পাশাপাশি সরকার দলীয় লোকদের সাথে। হাট বাজার ইজারাদার সিন্ডিকেটে সম্পৃক্ততার কথাও জানা গেছে।
উল্লেখ্য-উলিপুর পৌর যুবদল নতুন কমিটির আহবায়ক আলমগীর হোসেন উলিপুর গণকমিটি তথা নৌ রেল স্থল পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছে।যা পুরোটা বামপন্থি ও সরকার দলীয় লেজুড়বৃত্তি করে। সে সাংগঠনিক একজন কর্মী হলেও তার বন্ধু বান্ধব সবাই আওয়ামীলীগের ছাত্রসংগঠন ও কমিউনিষ্টপন্থী। সবাই এদের অনুপ্রবেশকারী বলেই জানে। নাম ধরে ধরে তদন্ত হলে কমিটির অনেকেরই অভিযোগ শতভাগ প্রমান হবে বলে স্থানীয় সূত্র গুলো নিশ্চিত করেছে। আপন আলমগীর ওরফে আলমগীর হোসেনের ছবি ও প্রোফাইল লিংক সার্চ ও তদন্ত করলেই স্পষ্ট প্রমান হয় যে তিনি মূলতঃ কোন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী ও তা লালন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুড়িগ্রাম বিএনপি ও যুবদলের একাধিক নেতাকর্মী জানান, এখানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে একটি পক্ষের পরামর্শে তাদের আনুগত্য মেনে নিয়ে, তাদের ব্যাক্তি বলয় ও প্রভাব ধরে রাখতেই পকেট কমিটি উপহার দিয়েছে রংপুর বিভাগীয় যুবদলের মধ্যস্থতায় অনুগত জেলা যুবদল কুড়িগ্রাম। তারা জেলা যুবদলের চলতি কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড শূন্য বলে দাবী করেছেন। সেই সাথে জেলা যুবদল ভেঙ্গে দিয়ে তারপর পুরো জেলার আহবায়ক কমিটির গঠন প্রক্রিয়া হাতে নেয়ার আহবান জানিয়েছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এই তালিকায় অন্তর্ভূক্তির জন্য ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাঃ সম্পাদক সিনিয়র সভাপতি সহ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতিদের নামের তালিকা দেয়া হলেও তারা তা অন্তর্ভূক্ত করেন নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।