কুমিল্লা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গুলিতে মৃত্যু
কুমিল্লা প্রতিনিধি, আবদুল মান্নান, ১৬ মার্চ, ২০২৪ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : কুমিল্লা শাসনগাছা লেগুনা স্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানো নিয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন জামিল হাসান অর্নব (২৭) নামে এক যুবক। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আহত হয়েছেন আরো চারজন। তারা ঢাকা ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। নিহত অর্নব শাসনগাছা মধ্যমপাড়া এলাকার আজহার আলীর পুত্র। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ডিগ্রী শাখায় পড়াশুনার পাশাপাশি শাসনগাছা বাসটার্মিনালে সততা বাস কাউন্টারে ম্যানেজারের চাকরি করতেন। এছাড়াও অর্ণব ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের সময় টার্মিনালে রাখা অন্তত ৫টি লেগুনা মাইক্রোবাস এবং দুইটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়।
নিহতের স্বজন এবং আহতদের অভিযোগ, স্থানীয় খলিলুর রহমানের ছেলে রাব্বির নেতৃত্বে গুলিতে অর্ণব নিহত হয়েছেন এবং অন্যান্যরা আহত হয়েছেন। ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে শাসনগাছায় অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের পরিবারের সাথে কথা বলেন জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান ও র্যাব-১১ সিপিসি-২ এর কমান্ডার লে: কমান্ডার মাহমুদুল হাসান।
পরে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর কুমিল্লার শাসনগাছা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পাশে লেগুনা স্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানো নিয়ে শুরু হয় তর্কাতর্কি। এঘটনাকে কেন্দ্র করে একই এলাকার মধ্যমপাড়ার মোল্লা ও দফাদার পরিবার জড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষে। সংঘর্ষের সময় গোলাগুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হয় অর্ণব নামে এক যুবক। আহত হন আরো ৪ জন। নিহত অর্নব স্থানীয় সততা বাস কাউন্টার ম্যানেজার এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র।
ঘটনার পর অর্ণবের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়- ছেলে হারানোর বেদনায় চিৎকার করে কাঁদছেন তার মা। অর্নবের বাবা আজহার আলী জানান, এই ঘটনায় সে জড়িত না। জুম্মার নামাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয় অর্ণব। ছেলে হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি জানান তিনি। এদিকে আহতদের মধ্যে এক জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। আহত অপর তিন গুলিবিদ্ধকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আহত নাজমুল জামান অনিকের পায়ে গুলি লেগেছে, নুরল আফসার মোহনের পায়ে, নেয়ামত উল্লাহর কোমড়ে এবং নাজমুল হাসানের হাতে নিচে গুলি লেগেছে বলে জানা গেছে।
আহত নাজমুল হাসান জানান, জুম্মার নামাজ পড়ছিলাম। মোনাজাতের সময়ই এই ঘটনা শুরু হয়। বাসার পাশেই ছিলাম- ঘরে ঢুকার সময় পাইনি। গুলি লেগে যায়। গুলিবিদ্ধ মোহন জানান, জুম্মার নামাজের পর এলাকায় এসেই দেখি রাব্বিসহ আরো কয়েকজন আমাদের গলি লক্ষ্য করে গুলি করছে। গুলিবিদ্ধ নেয়াতম উল্লাহ জানান, নামাজ পরে বাসায় ফিরছিলাম, আর পায়ে এসে গুলি লাগে। ঘটনা কি তা ই বুঝতে পারিনি। ঘটনার পর শাসনগাছা মধ্যমপাড়া ও বাসটার্মিনাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়।
পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান আরো জানান, ঘটনায় কোন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে যারাই জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব। স্থানীয় শাসনগাছা এলাকার অধিবাসীদের দাবি, জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এসে আগ্নেয়াস্ত্র গুলো উদ্ধার করা। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন শিবলু জানান, নিহত অর্ণব ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো। জেলা ছাত্রদলের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলো। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে অনেক রাজনৈতিক মামলাও ছিলো। গত রমজানেও সে যুবদলের প্রোগ্রাম থেকে গ্রেফতার হয়েছিলো।