আমরা একটি চৌকষ, পেশাদার ও জনবান্ধব পুলিশ সার্ভিস গড়ে তোলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, পুলিশকে জনগণের সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার আহবান : প্রধানমন্ত্রী
রাজশাহী, সারদা, ১৬ মে, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী তাদের সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। আমরা দেখতে চাই, আমাদের দেশের জনগণ পুলিশের কাছ থেকে যথাযথ সেবা পাচ্ছে এবং এই লক্ষ্যে আমরা একটি চৌকষ, পেশাদার ও জনবান্ধব পুলিশ সার্ভিস গড়ে তোলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে এখানে ৩৫তম বিসিএস ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারগণের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ বিপদের সময় পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য আসে। তাই সেবা ও মানবিক আচরণের মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করেন এবং কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এরআগে প্রধানমন্ত্রী একাডেমির অতিথি ভবন অরুনিমায় পৌঁছলে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। পরে প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মহাপুলিশ পরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী এবং একাডেমির প্রিন্সিপাল মো. নাজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের মধ্যে পদকও বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্য বৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তবৃন্দ, উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ, বিদেশি কূটনিতিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নতুন কর্মক্ষেত্রে নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়ে তাদের সমাজের নারী, শিশু ও প্রবীণদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করার আহবান জানান। সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলে জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশ গঠনে আপনাদের অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত থাকবেন।
দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে উন্নয়নকে টেকসই করতে পুলিশের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমি আশা করি, বাংলাদেশ পুলিশের নবীন কর্মকর্তাগণ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রশিক্ষণলদ্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ‘রূপকল্প-২০২১’ এবং ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। বিশ্বব্যাপী অপরাধের ধরন দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নিত্যনতুন অপরাধ দমনে পুলিশ সদস্যদের আরও তৎপর বিশেষ করে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে আরো দক্ষ হবার আহবান জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার আইন-শৃঙ্খলা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থকে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করছে। শেখ হাসিনা জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
১ জন মহিলাসহ মোট ১২৩ জন এএসপি এ কোর্স উত্তীর্ণ হন। তাদের মধ্যে মাহবুল হাসান ‘বেস্ট প্রবিশনার’, আসমা আক্তার সোনিয়া ‘বেস্ট একাডেমিক এ্যাওয়ার্ড’ ও সালমান ফার্সি ‘বেস্ট হর্সম্যানশীপ এ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। শিক্ষানবিস এএসপি সাইফুল ইসলাম রানা কুজকাওযাজ কমান্ডার ছিলেন। তাঁর সরকারের প্রত্যেক পদক্ষেপের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে দেশর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশের আধুনিকায়নে ৫০ হাজার জনবল সৃজনের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে ইতোমধ্যে ৪৬ হাজার পদ সৃজন করা হয়েছে। পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নতুন ইউনিট গঠন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে রংপুর আরআরএফ, ময়মনসিংহ রেঞ্জ, নারী আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ১২ আমর্ড পুলিশে ব্যাটলিয়ন গঠনসহ নতুন নতুন থানা, ফাঁড়ি ও তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। গাজীপুর ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ইউনিট এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূলে অ্যান্টি টেরিরেজম ইউনিট গঠন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট যেমন- পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং দুটি স্পেশাল সিকিউরিট অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। পুলিশের সেবা জনগণের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দিতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯, ডিবি পুলিশ হেল্প লাইন ও অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্ভিস চালু করা হয়েছে। একাডেমিকে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার অবকাঠামো ও একাডেমিক উন্নয়নে আরো পদক্ষেপ নেবে। দেশের সব পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিশ্বমানে উন্নীত করার পরিকল্পনা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা এ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলবো।
নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলে জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশ গঠনে আপনাদের অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত থাকবেন। মাদকের করাল গ্রাসে আমাদের তরুণ সমাজ আজ বিপদাপন্ন। এই ভয়াল থাবা থেকে আমাদের সমাজকে বাঁচাতে হবে। মাদক সেবনকারী, ব্যবসায়ী, উৎপাদক, সরবরাহকারী সবার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের পুলিশ যেমন জঙ্গি দমনে সফল হয়েছে, তেমনি মাদক থেকে আমাদের তরুণ সমাজকে রক্ষায় সফল হবে বলে আমার বিশ্বাস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে উন্নয়নকে টেকসই করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এক্ষেত্রে তিনি পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে পুলিশের নবীন কর্মকর্তাগণ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ‘রূপকল্প-২০২১’ এবং ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।