আইপিএল ক্রিকেট খেলা নিয়ে জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে যুবসমাজ
পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি, আল জাবির, ০১ নভেম্বর, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : শুরু হয়েছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ২০২০। দর্শক বিহীন মাঠে ব্যাটে বলে লড়ছে দুই প্রতিপক্ষ। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ক্রিকেট খেলা নিয়ে জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার যুবসমাজ ।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মুদি দোকান, সেলুন, হোটেল, ক্লাব ও ঘরে বসছে জুয়ার আসর। সবার হাতেই স্মার্ট ফোন থাকায় বিভিন্ন সাইটে লাইভ খেলায় জমে উঠছে জুয়ার আসর।
পাঁচবিবির স্টেশন, মহিপুর, দানেজপুর, ফেচকাঘাট, বাঁশখুর, বেড়াখাই (চাড়মাথা) মোড়েরহাট, কড়িয়া, ধরঞ্জি সহ বিভিন্ন স্থানে বেশিরভাগ খেলা নিয়ে বাজি ধরা হয়। এদের মধ্যে আবার অনেকেই আছেন যারা পেশাদার জুয়াড়ি। শুধু আইপিএল নয়, তারা সারা বছরই সিপিএল, বিগব্যাশ, আন্তর্জাতিক ম্যাচ, বিভিন্ন কাউন্ট্রি ম্যাচ নিয়ে প্রতিনিয়ত বাজি ধরে থাকেন।
তাদের মধ্যে আবার অনেকেই আছেন যারা অধিক লাভের আশায় জুয়ার বিভিন্ন সাইটে টাকার বিনিময়ে ডলার বিনিয়োগ করেন। অনেকসময় এসব সাইটের টাকা অযাচিত কারণে উধাও হওয়ার খবরও পাওয়া যায়। এভাবে অনেকেই লাভের আশায় সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। তবুও নেশায় আসক্ত হয়ে বাজি খেলা ছাড়া তারা থাকতে পারেন না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাঁচবিবির বিভিন্ন অঞ্চলের অলিগলিতে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে, টেস্ট, টি-২০ আসর, এমনকি দেশ-বিদেশের ঘরোয়া লিগ নিয়ে নিয়মিত চলে জুয়া। কোন দল জিতবে, কোন খেলোয়াড় কত রান করবে, কোন বোলার কয়টা উইকেট নেবে- এমন অনেক বিষয় নিয়ে বাজি ধরা হয়। সাধারণত জুয়ার খেলোয়াড়রা দুইভাবে বাজি ধরে থাকে।
প্রথমত, একসঙ্গে কোনো দোকান, সেলুন, হোটেল বা ঘরে বসে জুয়া খেলে। এরা বাজির টাকা নগদ পরিশোধ করে। দ্বিতীয়ত, বাড়ি, অফিস বা অন্যত্র বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচিতদের সঙ্গে বাজি ধরে। এরা টাকা লেনদেন করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। জুয়ার টাকার পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে হাজারের বেশি পর্যন্তু হয়। প্রতি ওভার কিংবা প্রতি বলেও বাজি ধরা হয়।
দোকানদার, সেলুনের নাপিত, ছাত্র সমাজ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এ জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বেশি। লোভের বশবর্তী হয়ে দিনমজুর ও প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরিরতরাও জুয়া খেলছেন।
এদের কেউ কেউ বাড়ির জিনিসপত্র বিক্রি করে ও সুদে ঋণ নিয়ে জুয়ায় অংশ নিয়ে সব হারাচ্ছেন। খেলা শুরুর আগেই জুয়াড়িরা টেলিভিশন বা মোবাইলের সামনে বসে পড়েন। সবার হাতে হাতে থাকে মোবাইল ফোন। জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে অনেক টাকার লেনদেন নিয়ে মাঝে মাঝে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার খবরও পাওয়া যায়।
সচেতন মহলের মতে, আইপিএল জুয়া শুধু পাঁচবিবিতে নয়, জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এ জুয়াতে তরুণ ও যুবকরা বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। খেলা হচ্ছে বিনোদন। এটি উপভোগ করার মনমানসিকতা তৈরি করতে হবে। এটি কখনও জুয়ার মাধ্যম হতে পারে না। খেলাকে উপভোগ না করে জুয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করলে অনেক বড় অঘটন ঘটতে পারে।
স্থানীয় সমাজকর্মীরা জানান, যেকোনো ধরণের জুয়া খেলা হারাম। জুয়া মানুষের মস্তিষ্ক খারাপ করে ফেলে। যারা বাজিতে হেরে যায় তারা টাকার লোভে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো জঘন্য কাজেও লিপ্ত হয়। এটি একটি জঘন্যতম অপরাধ। জুয়ায় জড়িত অপরাধীদের ধরে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের এমনভাবে শাস্তি দিতে হবে যেন অন্যরা আর জুয়ায় আগ্রহ না দেখায়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরমান হোসেনে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে ।