হাতের মধ্যে গাছের টুকরো রেখেই সেলাই

মাদারীপুর প্রতিনিধি, আরিফুর রহমান, ২১ আগস্ট, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : দুই ইঞ্চি আর পাঁচ ইঞ্চি সাইজের দুই টুকরো গাছের টুকরো রেখেই হাত সেলাই দেন মাদারীপুর সদর হাসপাতালের এক নার্স। শুধু তাই নয়, এক হাজার টাকা ঘুষের বিনিময় তাড়াহুড়া করে সেলাই দিয়ে বাড়ী পাঠিয়ে দেন মাদারীপুরের হোগলপাতিয়ার আলাম সর্দারের শিশুপুত্র রাকিব সর্দারকে। এরপর শুরু হয় যন্ত্রণা। এভাবে দুই মাস অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করে অবশেষে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ-হাসপাতালে দুই দফা অস্ত্রপাচারের পর যন্ত্রণা থেকে মুক্ত মিলে। তবে এরই মধ্যে অসহায় পরিবারের ছেলের হাতটি বেঁকিয়ে যায়। তাই দোষীদের উপযুক্ত বিচার আর ক্ষতিপূরণ চেয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আলম সর্দার।

ভূক্তভোগি পরিবার জানান, গেলো ১৫ মে শুক্রবার দুপুরে ঘরের মাঁচা থেকে পা পিঁচলে পড়ে যায় মাদারীপুর সদরের আলাম সর্দারের ১২ বছরের সন্তান রাকিব সর্দার। এসময় গাছের টুকরো হাতের ভিতর ঢুঁকে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় ছুঁটে আসে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। তাৎক্ষণিক কোন চিকিৎসক না পেয়ে অস্তির হয়ে উঠে দিনমজুর আলাম সর্দার। তখন দুই হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন জরুবি বিভাগের নার্স (ব্রার্দার) মো. তোতা মিয়া।

উপায়ান্ত না পেয়ে এক হাজার টাকা দিয়ে অনুরোধ করলে ওই নার্সসহ আরো দুই জন মিলে তাড়াহুড়া করে সেলাই করে দেন। এরপর কিছু ওষুধ লিখে বাড়ী পাঠিয়ে দেন। কিন্তু বাড়ীতে যাওয়ার পর শুরু হয় তীব্র যন্ত্রণা। এরপর থেকে প্রায়ই আসেন ড্রেসিং করাতে। কিন্তু ব্যথা কমার কোন লক্ষণ না দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্ত সেখানেও উন্নতি চিকিৎসা না পেয়ে ফরিদপুরে ‘রয়েল হাসপাতাল এন্ড ডিজিটাল ডায়গনিস্ট সেন্টারের চিকিৎসক আবু সালেহ আহমেদ সৌরভ অপরেশন করে হাত থেকে দুই টুকরো কাঠ বের করেন। যা প্রায় পাঁচ ইঞ্চি ও দুই ইঞ্চি হবে।

এব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্থ শিশুর পিতা আলাম সর্দার জানান, সরকারী কোটি কোটি টাকা দেয় আমাদের মতো গরীবদের চিকিৎসার জন্যে। কিন্তু এখানে চিকিৎসকরা কসাইয়ের মতো ব্যবহার করে। তাদের ভুল চিকিৎসায় আমার ছেলের জন্যে প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়। বিষয়টি নার্স মো. তোতা মিয়াকে জানালে আমাদের সাথে দুর্ব্যবহারও করে। আমরা দোষী ব্যক্তির শাস্তি দাবী করি। সেই সাথে ভুল চিকিৎসার জন্যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়ার দাবী করছি। না হলে আমরা আরো উপর মহলে যাবো।’

ভূক্তভোগি শিশু রাকিব সর্দার বলেন, ‘আমার হাতে এখনো খুব ব্যথা করে। রাতে ঘুমাতে পারি না। হাতও বেঁকা হয়ে আছে। আমরা অসহায় দেখে ডাক্তাররা ভুল চিকিৎসা করেছে। আমি তাদের বিচার দাবী করি। যেন আগামীতে এমন কাজ কারো সাথে না করতে পারে।’

অভিযুক্ত মো. তোতা মিয়া জানান, ‘আমার সেদিন করোনার ডিউটি ছিল। সেখানে থেকে জরুরি বিভাগে এসে দেখি শিশুটা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তখন তাদের থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে সুতা কিনে সেলাই করে দিয়েছে। হাতের ভিতর কিছু ছিল কিনা সেটা বুঝতে পারেনি। আমি ভালো করতে গিয়ে এখন দোষী হচ্ছি। এভাবে আর কারো উপকার করবো না। আমার ভুল হয়েছে।’

বিষয়টি জানা জানি হলে টনক নড়ে স্বাস্থ্য বিভাগের। জেলার সিভিল সার্জন মো সফিকুল ইসলাম জানান, ‘ক্ষতিগ্রস্থ্যর পিতা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমরা তা যাচাই-বাচাই করে দেখবো। এরজন্যে তদন্ত কমিটি গঠণ করা হবে। তারা যদি সদর হাসপাতালের কারো দোষ পায়, তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়া এই কাজটিও জঘন্য হয়েছে, আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিষয়টি খোঁজ খবর নিবো।’

ঘটনার দিন জরুরি বিভাগে কোন চিকিৎসক ছিল, সেটি সিভিল সার্জনও জানাতে পারেনি। তিনি আরো বলেছেন, সেদিন যে দায়িত্বে ছিলেন, তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *