সাউ পেরিলা শষ্যের তেল পুষ্টি ও খৈল পশুর জন্য পুষ্টিকর

নীলফামারী প্রতিনিধি, শাইখুল ইসলাম সাগর, ০৮ নভেম্বর, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টি-সমৃদ্ধ নতুন এক তেলজাত ফসলের নাম ‘সাউ পেরিলা’। এ ফসল থেকে লিনোলিনিক অ্যাসিড-সমৃদ্ধ তেল আহরণ ছাড়াও প্রাপ্ত খৈল, গবাদিপশুর জন্য পুষ্টিকর খাবার ও জৈব সার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা মিয়াপাড়া গ্রামে পরীক্ষাম‚লকভাবে পেরিলা চাষ শুরু হয়েছে।

কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, সাউ পেরিলা-১ বাণিজ্যিকভাবে চাষে যেমন তেলের আমদানির পরিমাণ কমে যাবে, তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও আনতে পারে আমূল পরিবর্তন। কৃষি অফিসের বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধকরণ প্রদর্শনীর মাধ্যমে ব্যাপক সম্ভাবনাময় নতুন ভোজ্যতেল পেরিলার পরীক্ষামূলক চাষে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন ওই গ্রামের কৃষক শাহজাহান মিয়া।

কোরিয়ান উচ্চমান এ নতুন তেল ঝুঁকিমুক্ত, রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ কম, বীজতলা থেকে ১০০ দিনে উত্তোলনযোগ্য, সরিষার মতো দানা হওয়ায় গ্রামীণ ঘানিসহ অটো অয়েল মিলে ভাঙানো যায়। অন্য ফসল থেকে এ ফসল অধিক লাভজনক হওয়ায় ওই এলাকার অন্য কৃষক এ ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। নতুন এ সম্ভাবনাময় ফসল সাউ পেরিলা-১ বাণিজ্যকভাবে চাষাবাদ এখন সময়ের অপেক্ষা।

মাগুরা মিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক শাহজাহান জানান, তিনি এবার ৩০ শতাংশ জমিতে এর চাষ শুরু করেছেন। ব্যতিক্রমী ফসল হিসেবে খরিফ-২, বর্ষা মৌসুমে চাষাবাদ হচ্ছে। এ তেলের সুগন্ধ অনেক বেশি, উচ্চমান এবং স্বাস্থ্যসম্মত, মধু আহরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে, এর কচি পাতা চায়ে মোহনীয় স্বাদ আনে, সালাত কিংবা সবজি হিসেবেও রান্না করে খাওয়া যায়। এ ফসল থেকে পাঁচ-ছয় মণ তেল বীজ উৎপাদন হবে বলে আশা করেন তিনি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার তুষার কান্তি রায় জানান, এ অঞ্চলে পেরিলা চাষের নতুন স্বপ্ন-সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে ঢাকা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পেরিলার গবেষণায় পিএইচডিতে অংশগ্রহণকারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা মো. আবদুল কাইয়ুম মজুমদারের নিকট থেকে বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদনের মাধ্যমে ওই কৃষকের মাঝে সরবরাহ করেন।

পেরিলা তেলে ৫০-৫৫ ভাগ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে, যা মানবদেহের জন্য খুব উপকারী। এ তেলে ক্ষতিকর ইরুসিক এসিড নেই। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ তেলটি দেশের তেলের ঘাটতি কমিয়ে আনার পাশাপাশি এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে যথেষ্ট অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, পেরিলা চাষ সম্পর্কে চাষিদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। এ এলাকার মাটি পেরিলা চাষে খুবই উপযোগী। আশা করি পেরিলা চাষে কৃষক শাহজাহান আলীর দিন বদলের পাশাপাশি আগামীতে এ উপজেলার কৃষিকে সমৃদ্ধ করে তুলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *