সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রীর সন্তান প্রসব; অভিযুক্ত শিক্ষক গ্রেফতার

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, আবদুল মান্নান, ১৪ অক্টোবর, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কোচিং সেন্টারে আটকে রেখে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রীকে বারবার ধর্ষণের কারণে সন্তানের প্রসবের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষক তারেকুর রহমান বাবুকে ও তার ভাই তৌহিদুর রহমান চৌধুরীকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার দুপুরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের দর্জি বাড়ির রেজাউর রহমানের ছেলে। এর আগে ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩নং আদালতে অভিযুক্ত শিক্ষকসহ ৫ জনকে আসামী করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

চৌদ্দগ্রাম থানা সূত্রে জানা গেছে, আদালতে ধর্ষণের মামলাটি রজু হওয়ার পর পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের মৌখিক নির্দেশে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাহফুজ আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষে পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন ত্রিনাথ সাহাসহ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ মনির হোসেন, সঙ্গীয় এএসআই সাইদুর রহমান ও ফোর্সের সমন্বয়ে একটি অভিযান টিম গঠন করেন।

ওই টিম প্রথমে ঢাকা ও পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় চট্টগ্রামে অভিযান পরিচালনা করে ধর্ষক অভিযুক্ত শিক্ষক তারেকুর রহমান ও তার ভাই তৌহিদুর রহমানকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, অভিযুক্ত শিক্ষক তারেক ভিকটিম ওই স্কুল ছাত্রীর সম্পর্কে খালাতো ভাই। ছুটির পর কোচিং সেন্টারে পড়ার নামে কৌশলে রেখে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে অভিযুক্ত শিক্ষক তারেক। এ সময় সে ধর্ষণের ছবি ধারণ করে রাখে। পরে এসব ছবি ইন্টারেনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তারেক আরও কয়েকবার ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে।

গত ২৪ এপ্রিল সপ্তম শ্রেণীর ওই ছাত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে ফেনী জেলা সদরের একটি ডায়াগনাস্টিক সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে আল্ট্রাসনোগ্রাম করালে অন্তঃসত্তার রিপোর্ট আসে। ভিকটিম ওই ছাত্রী অন্তঃসত্তা হয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী জানান, কোচিং সেন্টারে পড়ার সময় তারেকুর রহমান তাকে ব্লাকমেইলের মাধ্যমে একাধিকবার ধর্ষণ করে। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে এ ঘটনা তিনি কাউকে বলেননি। পরবর্তীতে মেয়ের ধর্ষিতা হওয়ার ঘটনার বিচার চাইতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানান বাবা।

এই নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল সালিশ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অন্তঃসত্তা ছাত্রীকে বিয়ে করতে হবে ধর্ষক তারেকুরকে। তারেক তাতে রাজি হয়ে আশ্বাস দেয়, বাচ্চা ভূমিষ্ট হওয়ার পর বিয়ে করবে। কিছু দিন অতিক্রম হলে ধর্ষক বাচ্চা নষ্ট করার জন্য চাপ দিয়ে ব্যর্থ হয়। এরপর গত ১২ আগস্ট ওই ছাত্রী একটি পুত্র সন্তান প্রসব করে।

কিন্তু বিয়ের পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত ২৫ সেপ্টেম্বর আবারও সালিশ বৈঠক বসলে ধর্ষক ও তার স্বজনরা বিয়েতে অস্বীকার করে। পরে ভুক্তভোগীর বাবা শিক্ষক তারেকুরসহ ৫ জনকে আসামি করে আদালতে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলো; লক্ষীপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন, তারেকুর রহমানের ভাই তৌফিকুর রহমান, তৌহিদুর রহমান ও রমজান আলী ভূঁইয়া।

বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নিশাত সালাউদ্দিন জানান, ‘কোচিং সেন্টারে ধর্ষণের ঘটনায় ৩নং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রফিকুল ইসলাম অভিযোগের বিস্তারিত শুনানির পর মামলাটি আমলে নিয়ে চৌদ্দগ্রাম থানাকে তদন্তসহ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার আদেশ দেন’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *