শৈলকুপায় শিশু সুমাইয়া ধর্ষন মামলায় এসআই ইকবাল কবিরের তেলেসমাতি তদন্ত ফাঁস, এজাহার, চার্জসিট ও মানবাধিকারের তদন্তের তথ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, কার কথা ঠিক ?

ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি, মোঃ জাহিদুর রহমান তারিক, ৬ জানুয়ারি, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম  নিউজ ২৪) : ঝিনাইদহে শৈলকুপার হাকিমপুর গ্রামে শিশু সুমাইয়া ধর্ষন মামলার চার্জসিট প্রদান করা হয়েছে। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শৈলকুপা থানার এসআই মোঃ ইকবাল কবির আদালতে চার্জসিট প্রদান করেন। শিশু সুমাইয়া ধর্ষন মামলায় বাদীর এজাহার, মানবাধিকার ও পুলিশের তদন্তে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য থাকায় মামলাটির ভবিষ্যাত নিয়ে হতদরিদ্র পরিবারটি শংকিত। প্রশ্ন উঠেছে কার কথা ঠিক ? মামলাটির রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায় মামলাটির বাদী তছির উদ্দীন ঘটনার ৬দিন পর শৈলকুপা থানায় উপস্থিত হয়ে একই গ্রামের মনোয়ার মোল্লার ছেলে শিমুলের (১৯) বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর শিমুলকে পুলিশ গ্রেফতারও করে। বাদী তার এজাহারে দাবী করেছেন, আসামী শিমুলই তার নাতনিকে ফুসলিয়ে নিয়ে ধর্ষন করে। পরবর্তীতে পুলিশ একই গ্রামের ভাজা বিক্রেতা ওসমান গনিকে সন্দিগ্ধ হিসেবে গ্রেফতার করে এই ধর্ষন ঘটনার সাথে যুক্ত করে জেল হাজতে পাঠায়। আদালত থেকে গত বৃহস্পতিবার ওসমান গণি জামিন লাভ করলেও শিমুল এখনো কারাগারেই আছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ ইকবাল কবির চার্জসিটে উল্লেখ করেছেন, বাদী ও সাক্ষিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ভিকটিমের ২২ ধারায় রেকর্ডকৃত জবানবন্দি, ডাক্তারী পরীক্ষার সনদ পর্যালোচনা ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় প্রাপ্ত তথ্যমতে গ্রেফতারকৃত আসামী ওসমান গণি বিশ্বাস সুমাইয়া ধর্ষনের সাথে জড়িত মর্মে সত্য বলে প্রতিয়মান হয়। সে কারণে মামলার এজাহার নামীয় আসামী শিমুলকে মামলা থেকে অব্যহতি দানের সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা শৈলকুপা থানার এসআই মোঃ ইকবাল কবির জানান, সামাজিক বিরোধর কারণে বাদী ও সাক্ষিগন শিমুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তাছাড়া যে স্কুলের জানালা দিয়ে শিশু সুমাইয়াকে ভিতরে ঢুকানো হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে তাতে সন্দেহ ও গরমিল পাওয়া গেছে। তিনি আরো বলেন, তদন্তকালে ভিকটিম সুমাইয়াকে ছবি দেখালে সে আসামী ওসমান গণিকে সনাক্ত করেন। ফলে ওসমান গণিই সুমাইয়াকে ধর্ষন করে বলে তদন্তে প্রতিয়মান হয়। তিনি ঝিনাইদহ মানবাধিকার বাস্তবায়ন কমিটির তদন্ত রিপোর্ট সত্য নয় বলেও দাবী করেন। এদিকে শিশু সুমাইয়ার মামি ও মামলার ৩ নং সাক্ষি নাজমা খাতুন অভিযোগ করেন, আমরা জেনে বুঝে ও নিশ্চিত হয়েই শিমুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। এই মামলা থেকে যদি তাকে অব্যহতি দেওয়া হয়, তবে তা হবে অন্যায়। তারা পুলিশের চার্জসিটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দিবেন বলেও জানান। নাজমা খাতুন বলেন, আসামী শিমুলদের পরিবারের সাথে তাদের কোন দিনই বিরোধ ছিল না। ঘটনার দিনও তার শ্বাশুড়ি নুর জাহান বেগম শিমুলদের বাড়িতে কাজ করেছে। তাই তদন্ত কর্মকর্তা সামাজিক বিরোধ বলে যে কথা বলছে তা সত্য নয়। এদিকে ঢাকা থেকে আগত দুজন প্রতিবন্ধি ভাষা পারদর্শি ও ঝিনাইদহ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার ৬ জন কর্মী নিয়ে সুমাইয়া ধর্ষন ঘটনা তদন্ত করেন। মানবাধিকার কর্মী বাবুল কুমার কুন্ডু, আশাফুল ইসলাম, আহম্মেদ হোসেন, গোলাম ফারুক, পাপিয়া সুলতানা ও সাইদুর রহমান পলাশ শৈলকুপার হাকিমপুর গ্রাম পরিদর্শন করেন। তাদের সাথে মাকসুদা আক্তার স্বর্ণ ও সালেহ আহম্মেদ শাওন নামে দুইজন ইশারাভাষী ছিলেন। মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থাটি তিন পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, আসামী শিমুল ভাল মানুষ নয়। পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড খারাপ। আসামীর পরিবার যেহেতু টাকা দিয়ে বার বার মামলাটি মিমাংশার চেষ্টা করছে, সেহেতু ১নং আসামী শিমুলের দ্বারা এমন ঘটনা ঘটেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে প্রতিবন্ধি শিশুটির বলা মতে এ ঘটনার সাথে আরেকজন জড়িত ছিল। আসামী শিমুলই দ্বিতীয় ব্যক্তিকে সনাক্ত করতে পারেন বলে তদন্ত রিপোর্ট অভিমত দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কর্মী বাবুল কুমার কুন্ডু জানান, ন্যায় বিচার ও মামলাটি প্রমান করে ধর্ষককে শাস্তি দেওয়ার জন্য বাদীকে আইনগত সহায়তা দেওয়া হবে। মামলার এজাহার, পুলিশ ও মানবাধিকারের তদন্তে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য থাকায় সুমাইয়া ধর্ষন মামলাটি আদৌ সাফল্যের মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে সর্ব মহলে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *