ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালতের কার্যক্রম চলবে : সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন

ঢাকা (সুপ্রিমকোর্ট), ১০ মে ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪): ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে বিচারকার্য পরিচালনা করতে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে সুনির্দিষ্ট বিচারিক এখতিয়ার দিয়ে তিনটি বেঞ্চ গঠন করে দেয়া হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত আজ এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী করোনাভাইরাস রোগ (কোভিড-১৯) এর সংক্রমণ মোকাবেলা ও শারিরীক উপস্থিতিতে ব্যতিরেকে সাধারণ ছুটিকালীন ও হাইকোর্ট অবকাশকালীন এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০ এবং অত্র কোর্ট কর্তৃক জারীকৃত প্র্যাকটিস ডাইরেকশন অনুসরণ করত: তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করে শুধু ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকার্য পরিচালনার জন্য প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন।

বেঞ্চ তিনটি হলো- বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের একটি বেঞ্চ। এখানে অতি জরুরি সকল প্রকার রিট ও দেওয়ানি মোশন এবং এ সংক্রান্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চে অতি জরুরি সব ধরনের ফৌজদারি মোশন এবং ওই সংক্রান্ত জামিনের আবেদন নেয়া হবে এবং বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চে আদিম অধিক্ষেত্রাধীন বিষয়সহ অন্যান্য মামলার আপিল শুনানি ও আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন।

 এদিকে, আদালতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিচারকাজ চালানোর বিষয়ে অধ্যাদেশ জারির প্রেক্ষিতে নিম্ন আদালতের ভার্চুয়াল কোর্টে জামিন শুনানি করতে নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো.আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় এবং এর ব্যাপক বিস্তার রোধকল্পে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সব আদালতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছুটির সময়ে বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর এলাকার মহানগর দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, বিশেষ জজ আদালতের বিচারক, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারককে এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজে অথবা তার নিয়ন্ত্রণাধীন এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০ এবং উচ্চ আদালতের জারিকৃত বিশেষ প্যাকটিস নির্দেশনা অনুসরণ করে শুধু জামিন সংক্রান্ত বিষয়গুলো তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতে সাধারণ ছুটিতে আদালত বন্ধ রেখে গত ২৬ এপ্রিল ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য সুপ্রিমকোর্টের রুলস কমিটি পুনরায় গঠন এবং ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওইদিন প্রথমবারের ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে ফুলকোর্ট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের ৮৮ জন বিচারপতি।

এ অবস্থায় গত ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভপতিত্বে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। দু’দিন পর ৯ মে ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশে বলা হয়, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমত হাইকোর্ট বিভাগ, সময়, প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে।

অধ্যাদেশে আরও বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাই থাকুক না কেন, যে কোনো আদালত এই অধ্যাদেশের ধারা ৫ এর অধীন জারি করা প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) সাপেক্ষে, অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষরা বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করে যে কোনো মামলার বিচার বা বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্য গ্রহণ বা যুক্ততর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় দিতে পারবে।

অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি বা ক্ষেত্রমতে দেওয়ানি কার্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। কোনো ব্যক্তির ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা হলে ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা অন্য কোনো আইনের অধীন আদালতে তার স্বশরীরে উপস্থিতির বাধ্যবাধকতা শর্ত পূরণ হয়েছে বলে গণ্য হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *