বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এ দিনটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, আজ ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদ দিবস

নরসিংদী প্রতিনিধি, (মুক্তিযুদ্ধ খবর) কে.এইচ.নজরুল ইসলাম, ২০ জানুয়ারি ২০১৮ (বিডি ক্রাইম  নিউজ ২৪) : আজ ২০ জানুয়ারি, শহীদ আসাদ দিবস।১৯৬৯ সালের এই দিনে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচীর মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে জীবন দেন ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এ দিনটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। আসাদের মৃত্যু ছিল এক বীরের মৃত্যু। পাকিস্তানের সামরিক একনায়ক আইয়ুবের স্বৈর শাসনের বিরুদ্ধে সাহসী যুদ্ধ করতে গিয়ে আসাদ জীবন দিলেন। আসাদের জীবনদান গোটা জাতিকে নতুন জীবনে জাগিয়ে তুললো। আসাদ শহীদ হওয়ার তিনদিন পর শোক পালন শেষে, ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি আওয়ামীলীগের ছয় দফা ও ছাত্রদের ১১ দফার ভিত্তিতে সর্বস্তরের মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার নামে ঢাকাসহ সারা বাংলার রাজপথ।সংঘটিত হয় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান।পতন ঘটে আয়ুব খানের। বিদ্রোহে ফেটে পড়লো গোটা জাতি। জন্ম নিল ঐতিহাসিক ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান। পতন ঘটলো আইয়ুব খানের। ৬৯ এর ২০ জানুয়ারি ছিল গণতন্ত্র ও স্বাধিকার আদায়ের স্মরণজয়ী শপথের দিন। সেদিনের গণঅভ্যূথান এক কাল জয়ী প্রেরনা। শহীদ আসাদ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, যুব, শ্রমিক ও সামাজিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচী নেয়। ২০ জানুয়ারি শনিবার সকালে নরসিংদীর শিবপুর শহীদ আসাদের কবরে পুস্পস্তবক অর্পন,  শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা ও গণ জামায়েত অনুষ্ঠিত হয়। আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ ১৯৪২ সালের ১০ জুন বর্তমানে মনোহরদী উপজেলার হাতিরদিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আলহাজ্ব মৌলভী এম.এ.আবু তাহের। মাতার নাম মতিজাহান খাদিজা খাতুন। আলহাজ্ব মৌলভী এম.এ.আবু তাহের মনোহরদী উপজেলার হাতিরদিয়া ছাদত আলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ০১/০১ /১৯৪১  থেকে ৮/০২/১৯৪৭ পর্যন্ত প্রধান শিহ্মকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালে শিবপুর হাইস্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন সম্পন্ন করে সিলেট এমসি কলেজে ভর্তি হয়। ১৯৬৩ সালে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে বি,এ এবং ১৯৬৮ সালে এম,এ পাশ করেন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা সিটি ল, কলেজে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক ছাত্র হিসাবে তিনি ঢাকা হলে বতর্মানে শহিদুল্লাহ হলে থাকতেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন ঢাকা হলে ভিপি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন (মেমন গ্রুপ) আবহায়ক ১৯৬৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর রবিবার মাওলানা ভাসানীর পূর্ব বাংলার হাট বাজারে হরতাল আহবান করেন। শিবপুরের তৎকালীন কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল মান্নান ভূইয়া ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা, ঢাকা হলের ভিপি আসাদুজ্জামান আসাদ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সফল ভাবে হরতাল পালন করে। কিন্তু হরতাল পালন কালে হাতিরদিয়ার পুলিশে গুলিতে ৪ জন শহীদ হন। আসাদ মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে ও ঢাকা এসে পত্রিকার অফিসে এ ঘটনায় খবর পৌছে দিলে পরদিন পত্রিকা গুলিতে ফলাও করে। এ সংবাদ ছাপা হয়। এ ঘটনা পূর্ব বাংলার জনসাধারণকে বিদ্রোহী করে তোলে এবং তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ূব বিদ্রোধী হয় আন্দোলন তীব্র গতি সবাই করে। স্বৈরতান্ত্রিক শাসক উচ্ছেদের জন্য ছাত্র সমাজ সর্বদলীল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে এবং ১১ দফা র্কমসূচি ঘোষনা করে। আন্দোলন জোরদার হতে থাকলে স্বৈরশাসক মিছিল সমাবেশের উপর ১৪৪ ধারা জারী করে। ২০ জানুয়ারি পুলিশী জূলুমের প্রতিবাদের হাজার হাজার ছাত্র, ছাত্রী উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্তরে ছাত্র নেতৃবৃন্দের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয় চত্তর থেকে বিরাট মিছিল বের হয়। মিছিলের একাংশ ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তা ধরে চানখার পুলের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় স্বশস্ত্র পুলিশ ইপিআর বাহীনি দ্বারা বাধা গ্রস্ত্র হলে সংঘর্ষের সূষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে বেলা আনুমানিক দেড়টায় মূল ঘটনা অনতি দূরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্ব দিকে প্রধান ফটকের পাশে ফুটপাতে জন্য পুলিশ অফিসারের পিস্তলের গুলিতে আসাদের হদপিন্ড বির্দীন হয়। গুলিবিদ্ধ আসাদের লাশ হাসপাতালের নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। পরের দিন ২১ জানুয়ারি নিজ গ্রাম শিবপুরের ধানুয়ার পারিবারিক গোরস্থানের তাকে দাফন করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *