বগুড়ায় আবাসিক হোটেলে মাদক ও দেহ ব্যবসা জমজমাট

বগুড়া প্রতিনিধি, এম নজরুল ইসলাম, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম  নিউজ ২৪) : আবাসিক হোটেল ও অভিজাত এলাকার বাসাবাড়িতেও গড়ে উঠেছে পতিতালয়। বগুড়া শহর ও শহরতলির বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা অধিকাংশ আবাসিক হোটেলে নারী দেহ ও মাদক ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। অনেক অভিজাত এলাকার বাসাবাড়িতেও গড়ে উঠেছে মিনি পতিতালয়। হোটেলগুলোতে ঘণ্টা চুক্তিতে রুম ভাড়া দেয়া হচ্ছে। হোটেলের পক্ষ থেকে বোর্ডারদের কাছে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক সরবরাহ করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বগুড়ার বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেল আছে। এর অধিকাংশে মাদক ও নারী দেহ ব্যবসা চলে। এসব হোটেলের ম্যানেজার বা কর্মচারীদের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী এবং ওইসব দেহ ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ রয়েছে। হোটেলের লোকজন খদ্দেরদের নারী ও মাদক এনে দেয়। সেখানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পোশাক ও বোরখা পরে নারীরা আসে। অভিজাত পরিবারের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরাও হোটেলে সময় কাটায়। খদ্দের অনুসারে প্রতি ঘণ্টা রুম ভাড়া নেয়া হয় ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা। আবার সারারাত কাটালে দেড় থেকে দুহাজার টাকা দিতে হয়।

অনেক হোটেলের রুম মাদক সেবন ও জুয়ার জন্যও ভাড়া দেয়া হয়ে থাকে। হোটেলের লোকজন মাদকসেবীদের চাহিদা অনুসারে মাদকদ্রব্য এনে দেয়। শহরের ঝাউতলা, বড়গোলা, কলোনি, মাটিডালি, তিন মাথা, উপ-শহর, চার মাথাসহ অনেক নামিদামি হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে পত্রিকায় লেখালেখির কারণে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদকসেবী ও অনৈতিক কাজে আসা নারী-পুুরুষকে ধরতে সক্ষম হলেও এই অনৈতিক ব্যবসা বন্ধ হয়নি আজও। মাঝে মাঝে কাউকে কাউকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে নিয়ে সাজার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার জানান, নামধারী আবাসিকগুলোতে দেহ ব্যবসা বেশি চলে। পুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে খদ্দের ও নারীদের গ্রেফতার করলেও হোটেলের মালিক বা ম্যানেজারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

তারা আরও জানান, খদ্দেরদের চাহিদা অনুসারে নারী ও মাদক সরবরাহ করা হয়। ফোন দিলে নারী ও মাদক হোটেলে চলে আসে। মাদক সেবন ও জুয়া খেলার জন্যও রুম ভাড়া দেয়া হয়ে থাকে। টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিনের পতিতা পল্লীগুলো ভেঙে দেয়ায় তারা বগুড়াসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বগুড়া শহরের নিশিন্দারা উপশহর, জলেশ্বরীতলা, কলোনি, তিব্বতের মোড়সহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় অসংখ্য বাড়িতে দেহ ব্যবসা চলছে।

বাইরে দালালের মাধ্যমে ফোনে চুক্তি হওয়ার পর খদ্দেররা মিস্টির প্যাকেট নিয়ে ওইসব বাসাবাড়িতে যায়। তাই তাদের কেউ সন্দেহ করে না। বিভিন্ন হোটেলে কাজের বুয়া হিসেবে অনেক মেয়ে রাখা হয়ে থাকে। বগুড়া শহরের একটি আবাসিক এলাকায় ছদ্দবেশে সরাসরি অনুসন্ধানে গিয়ে বাসার ভিতরে প্রবেশের পর একধিক গনমাধ্যম কর্মীর হাতে ক্যামেরা দেখেই উত্তেজিত হয়ে ওঠে পতিতালয়ের দালালরা। তর্কের সময় দালালরা সুযোগ বুঝে সটকে পড়ে। তখন কথা হয় দেহ ব্যবসায় জড়িত কয়েকজন নারীর সাথে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ পড়ুয়া দুইজন পতিতা জানান, লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি ভালো পোশাক কেনার স্বার্থেই তারা মাঝে মাঝে বোডিং এবং বিভিন্ন বাসাবাড়িতে যান। অনেক ছাত্রী খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ছেন বলেও জানায় তারা। কেউ অর্থের নেশায়, আবার কেউ কেউ পরিস্থিতির শিকার হয়ে এ পথে আসছে।

পতিতারা জানায়, ২০ মিনিট বা প্রত্যেক ঘন্টায় একজন পুরুষের সাথে সময় দিয়ে এক হাজার টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা এবং সারারাতের জন্য দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত দেয়। তবে আবাসিক হোটেলের চেয়ে বাসাবাড়িতে নিরাপত্তা বেশী। পুলিশের তেমন ঝামেলা নেই। দেহ ব্যবসায় কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের চাহিদা বেশী বলেও জানিয়েছে তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *