পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে মাদারীপুরবাসী

মাদারীপুর প্রতিনিধি, আরিফুর রহমান, ১৪ জুন, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : রফিকুল ইসলাম সুমন ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, বাড়ি মাদারীপুর শহরের পানিছত্র এলাকায়। গত ৯ জুন রাতে মাদারীপুর শহরের ডনোভান স্কুল সংলগ্ন শ্বশুড় বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে পানিছত্র এলাকার কিছু যুবক ছুটে যান তার শ্বশুড় বাড়িতে। সুমনের মৃতদেহ বাসার এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে সরান। পরবর্তীতে তারা জানতে পারেন করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন সুমন। করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নমুনা প্রদান করেছেন ৭ জুন তারিখে।
আজ (১৪ জুন) নমুনা প্রদানের ৮ দিন আর মৃত্যুর ৬ দিন অতিবাহিত হচ্ছে। কিন্তু এখনও সুমনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি মাদারীপুরে। আর এতো দিনে নমুনা না আসায় দুশ্চিন্তা আর মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে সুমনের মৃতদেহ স্পর্শ করা যুবকরা, রয়েছেন হোমকোয়ারেন্টাইনে।
এটা মাদারীপুর জেলার করোনা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষার ফলাফল আসার অবস্থায়। একটি রিপোর্ট আসতে সময় লাগছে প্রায় ৭ দিন। অথচ নমুনা প্রদানের পর রিপোর্ট আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন এরকম ৫ জন। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা এমন কয়েকজনের ব্যক্তির রিপোর্ট এখনও আসেনি।
বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তদের মধ্যে ছিল মাদারীপুর জেলার একজন। এছাড়া বাংলাদেশের প্রথম লকডাউন ঘোষণা করা উপজেলাটিও মাদারীপুরে। সাথে সাথে সর্বশেষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত রেড জোন এলাকা হচ্ছে মাদারীপুর। চলতি মাসে মাদারীপুরে নতুন করে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছেন ২৩০ জন। পাশাপাশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ জন ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন আরও ৩ জন। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন মাদারীপুর সদর হাসপাতালের এক সহকারী নার্স।
এতো কিছুর পরও সবচেয়ে দুঃখের বিষয় দেশের ৫৯ টি পিসিআর ল্যাবের মধ্যে নেই করোনা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষার জন্য মাদারীপুর জেলায় কোন পিসিআর ল্যাব। করোনা ভাইরাসের নমুনা প্রদানের পর রিপোর্ট আসার এই দীর্ঘ সময়ের কারণে সংক্রমন বিস্তার ঘটছে মাদারীপুর জেলায়। অনেকে নমুনা প্রদানের পর রিপোর্ট পাওয়ার পূর্বেই তার দ্বারা সংক্রমিত হচ্ছে অনেক ব্যক্তি।
মাদারীপুর জেলায় করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব এখন সময়ের দাবি। জোরদার হচ্ছে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও তোলা হচ্ছে দাবিটি। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ, সাংবাদিকসহ সর্বমহলের দাবি মাদারীপুরে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা। পাশাপাশি দাবি তোলা হচ্ছে মাদারীপুরে আইসিইউ স্থাপনে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, আজ রবিবার (১৪ জুন) জেলায় ৫০টি নমুনার ফলাফল আসে যা গত ০৬ জুন তারিখে সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া এখনও ৪৯২ টি নমুনার ফলাফল এখনও আসা বাকি রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধের জন্য নমুনা পরীক্ষার সাথে সাথে রিপোর্ট পাওয়া দরকার মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যার ফলে মাদারীপুরে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কোন বিকল্প নেই। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে মাদারীপুরবাসী।
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মাসুদ পারভেজ বলেন, মাদারীপুরে করোনা ভাইরাস বিস্তার ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে। মাদারীপুর জেলাতে করোনা শনাক্তের জন্য পিসিআর ল্যাব না থাকায় নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা পাঠাতে হয়। এই রিপোর্ট আসতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লেগে যায়। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির যেমন ঝুঁকি বাড়ছে, তেমন ঝুঁকিতে পড়ছেন আশেপাশের মানুষ। তাই অনতিবিলম্বে মাদারীপুরে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি করছি।
মাদারীপুরে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম জানান, গতকাল ভিডিও কনফারেন্সে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজি মহোদয়ের নিকট মাদারীপুরে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের বিষয়ে কথা বলেছি। জেলায় পর্যায় এখনও কোন পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয় নাই। তবে জাতীয় করোনা প্রতিরোধ কমিটি সারাদেশে করোনা বিস্তার বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা পর্যায় ল্যাব স্থাপনের সুপারিশ করেছেন। এটা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের বিষয়।
সরকারি অনতিবিলম্বে বাংলাদেশের প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত ও প্রথম (উপজেলা) লকডাউনকৃত মাদারীপুর জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সংক্রমন বিস্তার রোধে ভূমিকা রাখবে এমনটাই প্রত্যাশা মাদারীপুরবাসীর। পাশাপাশি মাদারীপুরে আইসিইউ স্থাপনের দাবিও মাদারীপুরের সর্বস্তরের মানুষের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *