দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে রাশিয়া, চীন ও ভারতকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার

ঢাকা, ০১ মে, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জোরালো ভূমিকা রাখতে রাশিয়া, চীন, ভারত ও জাপানের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে সফররত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) প্রতিনিধিদল তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্যে ঢাকা ও নাইপিদোর মধ্যকার স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্যে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমারের কাজ করা উচিত। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সংঘাত চাই না, এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সংকট সমাধানে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফর এবং মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করেন। আমরা এই সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছি। মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি অস্বীকার করছে না, তবে তারা এ চুক্তি বাস্তবায়নে নিষ্ক্রিয়।বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও লাওসসহ সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদ দমন সম্পর্কে বলেন, আমরা সন্ত্রাসবাদকে পুরো নিয়ন্ত্রণ করেছি। এ ব্যাপারে আমরা খুবই সতর্ক। আমাদের আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো খুবই সক্রিয়। রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আবাসনের জন্য ভাষান চর নামের একটি দ্বীপের উন্নয়ন চলছে। এ দ্বীপে কমপক্ষে ১ লাখ মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা হবে। সরকার রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন ও তাদেরকে পরিচয়পত্র দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা আগমনে স্থানীয় জনসাধারণ ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়েছে এবং এতে পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি কেল্লি কিউররি বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির ভূষসী প্রশংসা করেন। মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে কাজ করে একটি নতুন আন্তর্জাতিক মানদন্ড সৃষ্টির মাধ্যমে আপনি (শেখ হাসিনা) আমাদের সবার জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। রাশিয়ার প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়েন্সকি রোহিঙ্গা সমস্যায় বাংলাদেশকে মস্কোর সমর্থনের আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার সমর্থনের কথা স্মরণ করে বলেন, আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। চীনের প্রতিনিধি বলেন, বেইজিং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।

নিরাপত্তা পরিষদের ৫ স্থায়ী সদস্য ও ১০ অস্থায়ী সদস্য দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এই টিম কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের জন্য শনিবার বাংলাদেশে আসেন। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন- নিরাপত্তা পরিষদের ৫ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি। অপর ১০ সদস্য দেশের মধ্যে রয়েছেন- বলিভিয়া, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, ইথিওপিয়া, কাজাখস্তান, নেদারল্যান্ড, পেরু, পোলান্ড ও সুইডেনের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং আইভরি কোস্টের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *