ট্রাম্পের ঘোষণা ও প্রধানমন্ত্রীর ৬ দফা

ঢাকা, ২৫  সেপ্টেম্বর, ২০১৭, (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অব্যাহত রোহিঙ্গা নিধন অভিযানের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। বিশ্বের এক নম্বর ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র এত দিন কিছুটা নরম সুরে কথা বললেও গত বুধবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ব্যাপারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে দ্রুত ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো মিয়ানমারের সেনা অভিযানে রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যায়িত করে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘ যখন কোনো ঘটনার নিন্দা জানায় তখন সেখানে হস্তক্ষেপের প্রয়োজনও সামনে চলে আসে। এর আগে জাতিসংঘ মিয়ানমারে ‘জাতিগত নিধন’ চলছে বলেও উল্লেখ করেছে। নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতভাবে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নিধন অভিযানের নিন্দা জানিয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের কারণে যুক্তরাজ্যে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির বিভিন্ন সম্মাননা প্রত্যাহার শুরু হয়েছে। পাশাপাশি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহযোগিতা স্থগিত করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় রোহিঙ্গা নিধন বিষয়ে একটি গণ-আদালত পরিচালিত হচ্ছে। আজ এ বিষয়ে রায় আসছে। আরো অনেক দেশই মিয়ানমারের নিন্দায় মুখর হয়েছে এবং দুর্গত রোহিঙ্গাদের রক্ষায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। বৈশ্বিক এ প্রতিক্রিয়া অবশ্যই বেগবান হয়েছে বাংলাদেশের সফল কূটনৈতিক উদ্যোগের কারণে। বাংলাদেশকে এ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) কনটাক্ট গ্রুপের বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেখানে এ সংকটের সূচনা হয়েছে সেখানেই এর সমাধান হতে হবে। সমাধানের লক্ষ্যে তিনি ছয় দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে ১. রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চলা সব ধরনের নিপীড়ন এই মুহূর্তে বন্ধ করতে হবে; ২. বেসামরিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য মিয়ানমারের অভ্যন্তরে একটি নিরাপদ এলাকা গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের সুরক্ষা দিতে হবে; ৩. বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের বাড়িঘরে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে; ৪. কফি আনান কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে; ৫. রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে চিহ্নিত করার রাষ্ট্রীয় প্রপাগান্ডা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে এবং ৬. মিয়ানমারে না ফেরা পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর সহযোগিতা করতে হবে। উপস্থিত নেতাদের সবাই তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেন। অন্যান্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামেও বাংলাদেশকে একইভাবে সক্রিয়তা বজায় রাখতে হবে।

সারা বিশ্ব যেভাবে সক্রিয় হয়েছে, তার ভিত্তিতে আশা করা যায় যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রোহিঙ্গা সংকট এবার একটি সমাধানের দিকে এগিয়ে যাবে। চীন ও রাশিয়া প্রাথমিকভাবে মিয়ানমারের প্রতি কিছুটা নমনীয়তা দেখালেও তারাও এ সংকটের দ্রুত অবসান চায়। সর্বোপরি সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো বড় শক্তিগুলো যেভাবে এগিয়ে এসেছে, তা অত্যন্ত ইতিবাচক। আমরা আশা করি, মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীর দ্রুত বোধোদয় হবে এবং ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হওয়ার আগে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *