জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে ভার্ড কামালের নাম শীর্ষে

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, আবদুল মান্নান, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : আগামী ১৭ই অক্টোবর সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। গত ২৩ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ নির্বাচনের এ তফসিল ঘোষণা দেয়ার পর থেকে কুমিল্লায় দেখা দিয়েছে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচনে প্রার্থীদের তুমুল আগ্রহ। এরই মধ্যে জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সদস্য পদে নির্বাচনে লড়বেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাবেক ছাত্রনেতা এমরানুল হক কামাল (ভার্ড কামাল)।

তিনি জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের পন্নারা গ্রামের সন্তান। তিনি একজন ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক হলেও মানুষের ভালো বাসায় সিক্ত এমরানুল হক কামালকে ভার্ড কামাল নামেই চিনে সবাই। তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে ঘোষণার দেয়ার পর থেকেই চৌদ্দগ্রাম থেকে সদস্য পদে তাকে নির্বাচিত করতে একযুগে কাজ করছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ স্থানীয়রা।

ভার্ড কামাল জানান, তিনি ১৯৮৮ সালে ভলেন্টারি এসোসিয়েশন ফর রুরাল ডেভেলাপমেন্ট (ভার্ড) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৮ সালে ভার্ড আই কেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ৪টি চ্যারিটি বেইজড চক্ষু হাসপাতাল স্থাপন করেন যার সিলেটে ২টি, সুনামগঞ্জে ১টি ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ১টি চক্ষু হাসপাতাল রয়েছে। দরিদ্র, অসহায় ও মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় ৫০-৬০ লাখ মানুষকে বিভিন্নভাবে সেবা দিয়েছেন। ৪টি চ্যারিটি বেইজড চক্ষু হাসপাতালে প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে ও চৌদ্দগ্রাম থেকে প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশন করে চক্ষু চিকিৎসা সেবায় অনন্য অবদান রাখায় মানুষ ভালোবেসে তার নাম দিয়েছে ভার্ড কামাল। বর্তমানে চট্টগ্রাম ও সিলেটের সকল জেলায় ভার্ড এর কার্যক্রম চলমান আছে বলে জানান তিনি। যার সুবিধা প্রতিনিয়ত গ্রহণ করছে কয়েক লাখ মানুষ।

জানা যায়, তিনি ১৯৭৪ সালে ধৌড়করা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৭৭ সালে সরকারি কার মাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৮৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন সময় থেকেই তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। বর্তমানে তার ২ মেয়ে ও ২ ছেলে রয়েছে। তার বড় ছেলে ও বড় মেয়ে আমেরিকা থেকে পড়াশোনা শেষ করে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো দেখাশুনা করছেন, তার অপর মেয়ে হেলথ সাইন্স নিয়ে কানাডায় পিএইচডি করছেন ও তার ছোট ছেলে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এ প্রয়াস স্কুলে পড়াশোনা করছে।

সূত্র জানায়, ১৯৭০ সাল থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ভার্ড কামাল ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রামীন জনগোষ্ঠির জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবেশ উন্নয়ন, বন্যা দূর্গতদের সহায়তা প্রদান, দারিদ্র বিমোচন, বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছেন।

তিনি জানান, ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে খুব গভীর ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৭০ সালের গণ আন্দোলনে ছাত্রলীগকে সুসংঘটিত করার জন্য বিভিন্ন মিটিং, মিছিল ও বিক্ষোভ ইত্যাদিতে সক্রিয় ভাবে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় জড়িত ছিলেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা মুক্তি যুদ্ধ কালীন সময় মুক্তি যোদ্ধাদের সার্বিক ভাবে সহযোগিতা প্রদান করেছেন। ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর ঢাকা মহানগরসহ কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় স্বৈরাচার বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন তিনি।

১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী গণ আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন মানবতার এ ফেরিওয়ালা খ্যাত এ রাজনীতিবিদ। ২০২০ সাল থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচীর সাথে নিজ উপজেলায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আছেন। চৌদ্দগ্রামের রাজনীতিতে তার অবদানের কথা স্বরণ করে তিনি জানান, চৌদ্দগ্রামের গণমানুষের নেতা সাবেক রেলপথ মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোঃ মুজিবুল হক এর নেতৃত্বে ও উনার সার্বিক দিক নির্দেশনায় তৃণমুল পর্যায়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ১৯৭৬ সাল থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন সময়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, তৃণমুল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও এর সকল অঙ্গ সংগঠনের কর্মীদের সাথে গণসংযোগ ও তাদেরকে সংঘটিত করার কাজে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে আসছি।

জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমার প্রিয় নেতা সাবেক সফল রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক এমপি ও দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি জেলা পরিষদ নির্বাচন করবো। যদি দল আমাকে যোগ্য মনে না করে দলের সিদ্ধান্তের ব্যাত্যয় ঘটিয়ে কখনো কোন কাজ করিনি এবারও করবো না। আমি আপনাদের সকলের দোয়া ও সমর্থন কামনা করি পাশাপাশি আমার প্রিয় নেতা ও তার পরিবারের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

চৌদ্দগ্রামের দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাইন উদ্দিন ইবনে সুবহান ভূইয়া জানান, ভার্ড কামাল চক্ষু হাসপাতালের সহযোগীতায় প্রতি মাসে একবার তার মাদ্রাসায় বিনামূল্যে চক্ষু সেবা ক্যাম্প পরিচালিত হয়। যার মাধ্যমে কয়েক হাজার মানুষ সেবা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। তার এ অসামান্য অববদান আজীবন অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভার্ড কামাল একজন সমাজসেবী ও পরোপকারী মানুষ। দেশের দারিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য তার প্রতিষ্ঠিত চক্ষু হাসপাতালে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছে। বিপদে পড়ে যখনই মানুষ তার কাছে গিয়েছে তখনই তিনি তার সাধ্যমত সবাইকে সাহায্য সহযোগীতা করেছেন। এলাকার মানুষ তার মত দয়াবান ও পরোপকারী একজনকে পেয়ে খুবই খুশি। উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ নির্বাচনের এ তফসিল ঘোষণা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *