চৌদ্দগ্রামে আবারো মহাসড়ক অবরোধ করল বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, মো. আব্দুল মান্নান, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বকেয়া বেতন ও জেনারেল ফান্ডে জমাকৃত টাকার দাবিতে জিল ওয়্যারস্ লিমিটেড নামে বিদেশে রপ্তানীযোগ্য একটি জুতা ফ্যাক্টরীর বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আবারো অবরোধ সৃষ্টি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিক পক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আগামী বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সময় নিয়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদেরকে আশ্বস্ত করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা, পুলিশের এএসপি (সার্কেল) মো. সাইফুল ইসলাম সাইফ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ্ আল মাহফুজ, ওসি (তদন্ত) শুভরঞ্জণ চাকমা, হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শরফুদ্দীন, ওসি (অপারেশন) ত্রিনাথ সাহা সহ স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

জানা গেছে, শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের নানকরা নামক স্থানে অবস্থিত “জিল ওয়্যারস্ লিমিটেড” নামক জুতা ফ্যাক্টরীর সামনে বকেয়া বেতন ও জেনারেল ফান্ডের জমাকৃত টাকার দাবিতে আবারো মহাসড়ক অবরোধ করে।

শিলা বেগম, আফিয় বেগম, লাইজু আক্তার, শেফালী আক্তার, কল্পনা, পারভেজ, মোহাম্মদ আলী হোসেন ও মহিনসহ বহু শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, গত তিন মাস ধরে মালিক কর্তৃপক্ষ আমাদের বেতন পরিশোধ না করে গত ২১ অক্টোবর ফ্যাক্টরীটি বন্ধ করে দেয়। বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন এর আশ্বাসে আমরা আন্দেলন স্থগিত করি।

ফ্যাক্টরীর প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে জানায় ৩০ নভেম্বর শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে। আমরা বেতনের আশায় সকাল বেলায় ফ্যাক্টরীতে এসে জানতে পারি, আমাদেরকে আজকেও বেতন ভাতা পরিশোধ করা হবে না। এসময় শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে খবর পেয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ্ আল মাহফুজের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে এবং তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন।

বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা অভিযোগ করে আরো জানান, মালিক কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জন্য জেনারেল ফান্ডের নাম করে আমাদের থেকে প্রতি মাসে ৪’শ থেকে সর্বোচ্চ ৬’শ টাকা করে কেটে রেখে দেয়। পরবর্তীতে সু-কৌশলে, বিভিন্ন অজুহাতে মালিক কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদেরকে ছাটাই করে দেয়। কিন্তু কেটে রেখে দেওয়া জেনারেল ফান্ডে জমাকৃত কোন টাকাই পরে মালিক কর্তৃপক্ষ ফেরৎ দেয় না।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জিল ওয়্যারস্ নামের বিদেশে রপ্তানীযোগ্য জুতা ফ্যাক্টরীর মালিক জহির উদ্দিন তারেক বেসিক ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণের ঋণ গ্রহণ করে। বর্তমানে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ থেকে বাঁচতে তিনি প্রায় সময় নিজস্ব লোক দিয়ে শ্রমিক আন্দোলন উসকে দিয়ে মিডিয়ার নজরে এনে খবর কাভারেজ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেন। এব্যাপারে জিল ওয়্যারস্ লিমিটেডের কর্তৃপক্ষের সাথে বারবার যোগাযোগ করেও তাদের কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এবিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা জানান, বকেয়া বেতনের দাবিতে অবরোধরত শ্রমিক ও মালিক কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে আগামী বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) এর মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধ করার জন্য মালিক পক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদেরকে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। তাদের দাবির বিষয়ে ফ্যাক্টরী মালিকের সাথে আলাপ-আলোচনা করে আগামী বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত বকেয়া বেতন পরিশোধের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে মালিক পক্ষকে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা না হলে পরবর্তীতে মালিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *