গাইবান্ধায় ৩৩ টি পয়েন্ট নদী ভাঙ্গন; হুমকিতে বসতভিটা

গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি, একরামুল হক, ০৩ জুন, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : গাইবান্ধা জেলার উপর দিয়ে বৈয়ে চলেছে তিস্তা ব্রহ্মপুত্র যমুনা, কাটাখালি, ঘাঘট, বাঙ্গালী, করতোয়া, আলাইসহ কয়েকটি নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধির ফলে  গত এক সপ্তাহে এই জেলার প্রায় ৩৩ টি পয়েন্টে নদী ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানান, ১৪ টি পয়েন্ট পরিদর্শন করা হয়েছে ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে ।
সরেজমিনে গিয়ে ও বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়,  গাইবান্ধার তিস্তা ব্রহ্মপুত্র যমুনা, কাটাখালি, ঘাঘট, বাঙ্গালী, করতোয়া, আলাই নদী বেষ্টিত সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৩৩ পয়েন্টে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে । গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত বেলকা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এ উপজেলার ১০ টি পয়েন্টে গত ২ মাস থেকে নদী ভাঙ্গনের ফলে ইতোমধ্যে শতাধিক বসতভিটা নদী গর্ভে বিলিয় হয়েছে।
বেলকা ইউনিয়নের আব্দুল মালেক জানান, “ভাঙ্গন প্রতিরোধে নাম মাত্র বালিভর্তি ফেলানো হয়। আর শান্তনা দেয়া হয়। এভাবে নদী ভাঙ্গনের ফলে আমরা দিশেহাড়া হয়ে পরেছি।” গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানী ইউনিয়েনের ৫ টি পয়েন্টে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে । ঘুর্নিঝড় আম্পানের প্রভাবে ব্রহ্মপুত্র নদে হঠাৎ পানি বৃদ্ধির ফলে এই ভাঙ্গন দেখা দেয়। তবে ভাঙ্গন প্রতিরোধে এখনো পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন কাজ শুরু করেনি।
ফুলছড়ি উপজেলার কাতলামারী ও খাটিয়ামারি এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছরে এ উপজেলার মানচিত্র পাল্টে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশে গেছে। ফজলুপুর ইউনিয়নের খাটিয়ামারি চরে ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিয়ে এই চরটি নদী গর্ভে বিলিন হবে। এতে হাজারের বেশী পরিবার গৃহহীন হবে।
ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলমগীর হোসেন জানান, “২ বছরে খাটিয়ামারি বাজারের শতাধিক স্থাপতা নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। ফুলছড়ি উপজেলার দুর্গম চরের কারনে এই স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন কাজ করে না। চরে থাকি বলে আমরা মানুষনা।”

সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের বড়নতাইড় গ্রামে যমুনা নদীর পানি বাড়তে শুরু করায় স্রোতের তীব্রতা বেড়ে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত ১ সপ্তাহে এ ইউনিয়নের প্রায় ৫ একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে।

সাঘাটার ভরতখালী ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল আজাদ শীতল জানান, “যখন শুকনো মৌসুম তখন বাধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কাজ চোখে পরেনা। যখন বর্ষা মৌসুম আসে বা নদী ভাঙ্গন দেখা দেয় ঠিক তখননি শুরু হয় পনি উন্নয়ন বোর্ডের দৌড়-ঝাপ।”

নদী ভাঙ্গনের স্বীকার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম জানান, “মুক্তিযুদ্ধের সময় সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার যে গ্রাম গুলোতে আমরা অবস্থান করি সেই গ্রামগুলো নদী গর্ভে হাড়িয়ে যাচ্ছে। বড়নতাইড় গ্রামে জন্মগ্রহনের স্মৃতি হাড়িয়ে নিজেকে নদীর কাছে পরাজিত সৈনিক মনে হচ্ছে।”

অপরদিকে এই উপজেলার বাঙ্গালী নদীর উপর দিয়ে গুরত্বপুর্ন সেতু মেলান্দহ। এই সেতুর দক্ষিনে বাঙ্গলী নদীর ভাঙ্গনের কবলে চর পাড়া গ্রাম নদী গর্ভে বিলিনের পথে ।

এ গ্রামের নদী ভাঙ্গনের হুমকিতে স্থানীয় রাজু মিয়া অভিযোগ করেন “এই স্থানে ভাঙ্গন ঢেকাতে বার বার কাজ করার কথা বললেও কোন কাজ করছেন না পানি উন্নয়ন বোর্ড। ”

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন জানান, “বাঙ্গালী নদী বেষ্টিত গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ, রাখাল বুরুজ, আদর্শগ্রাম  ও সাঘাটা উপজেলার কচুয়া, রামনগর, গুজা এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত ২ বছরেও  এইসব এলকার ৫ শতাধিক বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে।”

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোকলেছুর রহমান জানান, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে গাইবান্ধা জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডেও কাজ অব্যহত আছে। নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে যে সব এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে সে সব এলাকায় বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জনাব মো: আব্দুস শহিদ জানান, ‘গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা গুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *