কুমিল্লায় সাংবাদিক হত্যা প্রধান আসামি বন্ধুকযুদ্ধে নিহত

কুমিল্লা প্রতিনিধি, আব্দুল মান্নান, ১৮ এপ্রিল, ২০২২ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : কুমিল্লায় সাংবাদিক মহিউদ্দিন হত্যা মামলার প্রধান আসামি রাজু (৩৫) র‌্যাবের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত ২টার দিকে কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথুবি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গোলাবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাজু কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথুবি ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামের সাদেক মিয়া ছেলে। শনিবার মধ্যরাতে সীমান্ত টপকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সে র‌্যাবের জালে ধরা পড়ে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। যদিও ঘটনার পরপর র‌্যাব এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কোনো কথা বলেনি।

তবে গুলিবিদ্ধ রাজুর লাশ কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাসপাতালের পরিচালক ডা.মহিউদ্দিন। কুমেক হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, রাত সোয়া ২টায় রাজুকে র‌্যাবের গাড়িতে করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন সে আর বেঁচে নেই। হাসপাতালের রেজিস্ট্রি খাতায় রাত ২টা ১৫ মিনিটে তার নাম ঠিকানা নিবন্ধন করা হয়। পরে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মর্গে। এ ঘটনায় জোবায়ের নামের র‌্যাবের এক সদস্য আহত হয়েছেন। তিনি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বলেও জানা গেছে।

রবিবার সকালে র‌্যাব-১১ ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-২ কুমিল্লার অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, শনিবার রাতে র‌্যাবের সদস্যরা চোরাচালান বিরোধী অভিযান চালাতে গোলাবাড়ি এলাকায় যান। তখন র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। একই সঙ্গে হামলা চালানো হয়। এ সময় র‌্যাবও আত্মরক্ষার্থে ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় পাল্টা গুলি করে। ওই বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থলে এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় সেখান থেকে একটি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়। দ্রুত তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি জানান, এ ঘটনায় র‌্যাবের এক সদস্য আহত হয়েছেন। মেজর সাকিব বলেন, মৃত ঘোষণা করার পর জানা গেল ওই ব্যক্তির নাম মো. রাজু। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে। সে ওই গ্রামের সাদেক মিয়ার ছেলে। তবে পরিবার নিয়ে ময়নামতি সাহেব বাজার এলাকার ১৫ নম্বর গেটে থাকতো। তাঁর সেনানিবাস এলাকায় মোটরসাইকেলের ব্যবসা আছে। এর আড়ালে সে মাদক ব্যবসা ও সীমান্ত দিয়ে কাপড় আনা-নেওয়ার ব্যবসা করতো।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের হায়দ্রাবাদ সীমান্তে মাদক কারবারির গুলিতে মহিউদ্দিন সরকার নাঈম নিহত হন। পরদিন রাতে নিহত সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার নাঈমের মা নাজমা আক্তার বাদী হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৬ জনকে আসামি করে বুড়িচং থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের সাদেক মিয়ার ছেলে ও একাধিক মাদক ও অস্ত্র মামলার আসামি মো. রাজুকে (২৪)।

রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। চারজনকে গ্রেফতারের পর বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুজন এজাহার নামীয় ও দু’জন অজ্ঞাতনামা আসামি। মামলার আসামিরা এবং হত্যাকান্তের শিকার মহিউদ্দিন পূর্ব পরিচিত ছিল। পূর্ব শত্রুতার জেরে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে আমরা প্রাথমিক তদন্তে পেয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *