অনিয়মের অভিযোগে সাদুল্লাহপুরে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম স্থগিত

গাইবান্ধা প্রতিনিধি, একরামুল হক, ০২ জুন, ২০২০ (বিডি ক্রইম নিউজ ২৪) : গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে সরকারিভাবে বোর ধান ক্রয়ে কৃষকের তালিকায় অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে দুটি খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে লটারীতে নির্বাচিত ২১২০ জন কৃষকের তালিকা পুন: যাচাই-বাছাই করে স্বচ্ছ তালিকার পর ধান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা খাদ্য বিভাগ।

গতকাল দুপুরে গাইবান্ধা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এরআগে, গত ১৮ মে সাদুল্লাপুরে ধান সংগ্রহে কৃষক তালিকায় অনিয়ম ও অসঙ্গতি নিয়ে যমুনা টেলিভিশনে প্রতিবেদন প্রচার হলে সর্বত্রই আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সচিত্র প্রতিবেদন দেখে নড়েচড়ে বসে খাদ্য বিভাগ ও কৃষি বিভাগসহ স্থানীয় ধান সংগ্রহ কমিটি। পরে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম স্থগিত করে তালিকা পুন: যাচাইয়ে সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগকে পত্র দেয় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা।

জেলা খাদ্য বিভাগের পত্র পাওযার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খাজানুর রহমান জানান, প্রত্যেক ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্বাচিত কৃষকের তালিকা পুন: যাচাই-বাছাইয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকৃত কৃষকদের বাছাইয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। দ্রুতই একটি স্বচ্ছ তালিকা তৈরী করে কৃষকদের কাছে ধান ক্রয় করা হবে। এছাড়া পূর্বের তালিকা তৈরীতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কোন অবহেলা ও গাফিলতি আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চলতি মৌসুমে সাদুল্লাপুর উপজেলার দুটি খাদ্য গুদামে গত ১৩ মে ২৬ টাকা দরে ২৯৫২ মেট্রিক টন বোর ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করে খাদ্য বিভাগ। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে ১১ ইউনিয়নে লটারীতে নির্বাচিত ২১২০ জন কৃষকের তালিকা প্রকাশে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতিসহ নানা অসঙ্গতির অভিযোগ ওঠে। সরেজমিন অনুসন্ধানে দামোদরপুর ইউনিয়নের কৃষকের তালিকায় নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতির প্রমাণও পাওয়া যায়। তালিকায় ভিটেমাটি ছাড়া ফসলি জমি নেই, জড়িত নন কৃষি কাজের সঙ্গেও এমন অনেক ব্যক্তির নাম অর্ন্তভুক্ত হয়েছে।

অনেক প্রকৃত কৃষকের নাম বাদ গেলেও তালিকায় দেখা যায় মৃত্যু ব্যক্তি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী ও চাকুরীজীবিসহ অনেকের নাম। এছাড়া বাবা-ছেলে ও ভাইসহ একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নামও তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। শুধু দামোদরপুর ইউনিয়নেই নয়, কৃষকের তালিকায় এমন অনিয়ম-অসঙ্গতির চিত্র পাওয়া গেছে সাদুল্লাপুর উপজেলার ১১ ইউনিয়নজুড়েই। সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজসে মনগড়া ও পছন্দের কৃষকের নাম তালিকাভুক্ত করেন, এমন অভিযোগ এলাকার প্রকৃত কৃষক ও সচেতন মহলের।

অপরদিকে, লটারীর নির্বাচিত অধিকাংশ কৃষকদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে কৃষি কার্ড হাতিয়ে নিতে মাঠে সক্রিয় একটি সিন্ডিকেট চক্র। অনুসন্ধানে লালবাজার এলাকায় মোজাম্মেল নামে এক ব্যবসায়ী কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের কার্ড কেনার কথা স্বীকার করে বলেন, ধান দিতে সামর্থ ও আগ্রহ নেই এমন কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের কার্ড ক্রয় করছেন তিনি। এসময় তার মতো অনেক ব্যবসায়ী কৃষকের কার্ড কিনে গুদামে ধান দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি। এছাড়া লটারীতে নির্বাচিত জামুডাঙ্গা গ্রামের ডিপটি ও আহাদুন্নবীসহ একাধিক কৃষক মোজাম্মেলের কাছে তাদের কার্ড বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *